ভিডিও>>পাল্টে গেলো ভিকারুননিসা নুন স্কুলের আন্দোলন
মোস্তাক আহম্মেদ,বিশেষ প্রতিনিধি বাংলার চোখ
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনাকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, শাখা প্রধান এবং এক শ্রেণিশিক্ষককে চিহ্নিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা তদন্ত কমিটি। গত বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জমা দেওয়া এই তদন্ত প্রতিবেদনে অরিত্রীর আত্মহত্যা আগে তার ও তার বাবা-মার সঙ্গে বিদ্যালয়ে যা করা হয়েছিল তার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। কমিটি বলছে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শাখা প্রধান জিনাত আখতার এবং শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনার অশোভন আচরণ, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং অরিত্রীর বাবা-মার সঙ্গে অধ্যক্ষ ও শাখা প্রধানের নির্দয় আচরণ অরিত্রীকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে। ভিকারুননিসা নূন অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা কাল থেকে যথারীতি ক্লাস ও পরীক্ষায় ফেরার ঘোষণা দিয়েছে।অরিত্রি আত্মহত্যার দায়ে স্কুলের গভর্নিংবডির পদত্যাগসহ ৬ দফা দাবি পূরণে স্কুল কর্তৃপক্ষের আশ্বাস দেয়ার পর তারা এই ঘোষণা দেয়।
বৃহস্পতিবার স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে প্রায় ২ ঘন্টা বৈঠক শেষে বের হয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান আন্দোলনের মুখপাত্র আনুশকা রায়। আনুশকা বলেন, শিক্ষক আমাদের ছয় দফা দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। ছয় দফার মধ্যে ১ ও ৫ নং স্কুলের আইনে বাহিরের থাকায় সেগুলো স্কুল কর্তৃপক্ষের পক্ষে মানা সম্ভব না। তবে বাকি সব দাবিগুলো মেনে নেয়ায় আমরা কাল থেকে ক্লাসে ফিরে যাব। এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকরা কথা বলে তাদেরকে বৈঠকে নিয়ে যান। তখন এই বৈঠকে কোনো অভিভাবকদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এক পর্যায়ে অভিভাবক ধস্তাধস্তি করে প্রবেশ করতে চাইলেও কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তবে বৈঠক থেকে বের হয়ে এক শিক্ষার্থী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলেও সে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি। এর আগে বেলা পৌনে ১২টার দিকে আনুশকা রায় বলেছিলেন, আজকের মধ্যে সব দাবি মেনে নিতে হবে। নইলে আন্দোলন চলতে থাকবে। তবে বিকালে ভিকারুননিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজের আন্দোলনের চেহেরাটা পাল্টেদিলেন মুখপাত্র আনুশকা রায়। শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমেটর সাথে ২ ঘনটার রুধদার বৈঠক শেষে পাল্টেদেন সকল আন্দোলনের চেহেরা। এসময় অনেক অভিভাবক এবং অনেক শিক্ষার্থী মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে স্থানত্যাগ করেন। ভিকারুননিসার শিক্ষক হাসনা হেনার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে নেমেছে শিক্ষার্থীদের একাংশ।
তারা ভিকারুননিসার প্রভাতি শাখার শিক্ষক হাসনা হেনা কে নির্দোষ দাবি করে বিক্ষোভ করে। শিক্ষকা হাসনা হেনার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে। নবম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী বলেন আমরা মনে করি হাসনা হেনা আপা নির্দোষ। কেননা অরিত্রির বাবা মা হাসনা ম্যাডামকে দোষী সাব্যস্ত করেননি। কিন্তু যারা দোষী তাদের কে গ্রেফতার করা হয়নি। ম্যাডামকে মুক্তি না দিলে নতুন করে কমর্সূচি দেয়া হবে। এদিকে গত দুই দিনের ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবারও সকাল থেকে স্কুলের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছিল শিক্ষার্থীরা। তারা পরিচালনা কমিটির পদত্যাগ দাবি করেছে। ছাত্রীরা জানায়, তারা যে ছয় দফা দাবি জানিয়েছে, তার মধ্যে কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। এতে তারা সন্তুষ্ট। বাকি দাবিগুলোরও বাস্তবায়ন চায় তারা। আজই অরিত্রী বাবা-মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের জন্য পরিচালনা কমিটির সদস্যদের পদত্যাগ এবং তাদের কাছে কর্তৃপক্ষের প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানায়। এরপরই পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়া হয়। প্রসঙ্গত সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর শান্তিনগরে সাততলা ভবনের সপ্তমতলায় নিজ ফ্ল্যাটে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় অরিত্রিকে পাওয়া যায়। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে চিকিৎসকরা অরিত্রিকে মৃত ঘোষণা করেন।
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।