আমাদের সুখী হয়ে বেঁচে থাকা অনেকাংশে নির্ভর করে আমাদের দেশ এবং আমাদের বসবাসরত শহরের ওপর। আমরা যদি পৃথিবীর বিখ্যাত কিছু দেশের কথা চিন্তা করি তাদের যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন আর সুশৃঙ্খল মনে হবে। তবে এইসব দেশেরও বিভিন্ন শহরের বিভিন্ন ধরণের সমস্যা থেকে থাকে। যেমন: লস এঞ্জেলস এ সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ট্রাফিক। লুইসিয়ানার নিউ অরলিন্সে প্রবল সামুদ্রিক ঢেউ এর অন্যতম সমস্যা। তবে কিছু কিছু শহরের এমন কিছু সমস্যা থাকে যেগুলো বহুদিন পুরাতন, যেগুলো দীর্ঘকাল ধরে হয়ে এসছে। কিন্তু সেগুলো এতো স্পষ্ট আর অপ্রত্যাশিতভাবে এত অদ্ভুত যে আপনার বিশ্বাস করতে বেশ কষ্ট হবে। অথচ এই অদ্ভুত সমস্যা গুলো ই কোনো কোনো দেশের মারাত্মক সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
জেনে নিন তেমনই পাঁচটি উন্নত শহরের ৫টি আজব সমস্যা সম্পর্কে-

এভাবেই রোমের গাড়িগুলোকে পাখির বিষ্ঠায় ভরে যেতে দেখা যায়
১। রোম
রোম বেশ বিখ্যাত একটি শহর যেখানে সুপ্রাচীন সময় থেকে মানুষ নিজেদের জীবন স্বাচ্ছন্দ্যে অতিবাহিত করে আসছে। এই শহরটি হাজার বছরের পুরোনো ইতিহাস আর পরিপূর্ণতা নিয়ে আজো একইভাবে গর্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে কারণেই সম্ভবত এটা খুব মজার আর আশ্চর্যের বিষয় যে প্রতি বছরের অক্টোবরের দিকে ইউরোপের উত্তরদেশ ও পূর্বদেশ থেকে আগত প্রায় লাখ লাখ অভিবাসী এক ধরণের পাখি রোমে আশ্রয় নেয় এবং সারা শহর মলত্যাগ করে ভরিয়ে দেয়। ধরুন আপনি সকাল বেলা খুব পরিচ্ছন্ন হয়ে গাড়ি নিয়ে অফিসের দিকে যাওয়ার জন্যে বেরুলেন এবং তৎক্ষনাত যা কাজ ঘটার তা ঘটে গেলো! আপনার কেমন অনুভূত হবে? খুব বিরক্ত হবেন নিশ্চয়ই? অথচ এমতাবস্থায় কিছুই করার নেই।
অক্টোবরের প্রতি ভোরে রোমে লাখখানেক পাখি অবতরণ করে এবং সেখানকার কিছু ফার্ম থেকে জলপাই গুরুভোজ করে। এবং খানিক বিশ্রাম নেয়ার পর সেগুলো যথেষ্ট পরিমাণে ত্যাগ করে শহরের বিভিন্ন জায়গায়। বাড়িঘর, দোকান, গাড়ি,যানবাহন, রাস্তাঘাট চারিপাশের সব জায়গায়। এই অদ্ভুত সময়ে রোমবাসী রোদ বৃষ্টি ছাড়াও ছাতা ব্যবহার করতে বাধ্য থাকে!

সান ফ্রান্সিসকোর মানুষের বিষ্ঠা দ্বারা পরিপূর্ণ এলাকাগুলোর মানচিত্র
২। স্যান ফ্রান্সিসকোর
পৃথিবীর অন্যতম সম্পদশালী ও প্রযুক্তিনির্ভর শহর স্যান ফ্রান্সিসকো। আধুনিক জীবন যাপনের সব কিছুই পাওয়া যাবে স্যান ফ্রান্সিসকোতে - শুধুমাত্র পাবলিক টয়লেট বাদে ! হ্যাঁ, সত্যিই তাই। স্যান ফ্র্যান্সিসকোর জনসংখ্যা ইসানীং এত বেড়েছে যে, রাস্তার ভাসমান মানুষদের জন্য টয়লেট বানানোর পর্যাপ্ত জায়গাই যে নেই সেখানে! এ কারণে ঘরহারা মানুষজনও বাধ্য হচ্ছেন রাস্তার পাশে কাজ সারতে! এ কারণেই দিন দিন বিষ্ঠার নগরীতে পরিণত হচ্ছে শহরটি।

ভণ্ড সন্ন্যাসীদের বিরুদ্ধে সচেতন করতে বোস্টনের রাস্তায় একটি বিলবোর্ড
৩। বোস্টন
আপনি যদি সাধারণ আমেরিকান কোনো নাগরিক কে কোনো বুদ্ধ সন্ন্যাসী সম্পর্কে কোনো শব্দ বলতে বলেন, যে কেউ এক বাক্যে জবাব দিবে " শান্তিপূর্ণ "। তবে কিছু বিরুদ্ধ আর প্রতারক গোষ্ঠী আছে এমন যারা হতাশাজনক ভাবে একটি খ্যাতি বয়ে বেড়ায় নিজেদের এমন সন্ন্যাসী পরিচয় দিয়ে। যারা তাদের মেকি প্রার্থনার কবলে ফেলে মানুষদের প্রতিনিয়ত ঠকিয়ে বেড়ায়। জঘন্য এই নিন্দনীয় কাজের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ট্যুরিস্টদের কথা চিন্তা করে বোস্টন শহরে আর্মির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বোস্টন শহরের নান্দনিকতার আড়ালে এই সমস্যা টি প্রধান একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভেবেই দেখুন ভণ্ড সন্ন্যাসীদের প্রকোপ রোধে সেনাবাহিনী মোতায়েন- ব্যাপারটা কতটা সিরিয়াস!
৪। নিউইয়র্ক
নিউইয়র্ক শহরের অধিকাংশ ট্যাপের পানি চিংড়ি মাছ জাতীয় ছোট প্রাণীতে পরিপূর্ণ যেগুলো কে কোপপডস বলে। এই কঠিন আবরণ যুক্ত প্রাণী গুলো খুব নগন্য এবং নিরীহ প্রজাতির। কিন্তু পানি থেকে ছোট্ট এই প্রাণী গুলো বিনাশ করাই হলো বিপদজনক আর ক্ষতিকর। Department of Environmental Protection অনুযায়ী তারা " স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য জলাধার পরিচ্ছন্ন" শর্ত আরোপ করে। কিন্তু ঝামেলা হলো এই কোপপডস কীট নিধন ইহুদিদের ধর্ম অনুযায়ী মারাত্মক পাপ হিসেবে বিবেচিত। সঠিক নির্দেশনা অনুযায়ী খোলযুক্ত সামুদ্রিক জ্যান্ত প্রাণী ধ্বংস করা নিষিদ্ধ।
যে প্রাণীগুলো খালি চোখে দেখা যায় নির্দেশনা অনুযায়ী সে প্রাণী গুলো বিনাশ করা নিষিদ্ধ। কিন্তু যেসব প্রাণী খালি চোখে দেখা যায় না, ১.৫ মিলিমিটার পরিমাণ ছোট, সঠিক নির্দেশনা অনুযায়ী সে প্রাণী থেকে পানি পরিশুদ্ধ করে খাওয়া আইনত। সে কারণে অর্থডক্স ইউনিয়ন পৃথিবী বিখ্যাত সবচেয়ে বড় Kosher certificate agency একটি অফিশিয়াল স্টেটমেন্ট প্রকাশ করে। যেখানে কোনো ধরণের দুর্ঘটনা সম্পন্ন সংক্রমণ ছাড়া সবধরণের পানি পরিশুদ্ধের নীতিমালা গ্রহণ করা আছে। তবে তাদের জোড়ালো নীতিমালায় সবাই পরিষ্কার সর্বসম্মত মত দেয়নি। গোসল অথবা দাত ব্রাশকালে দুর্ঘটনাবশত কোনো পোকা মেরে ফেললে অথবা কখনো গিলে ফেললে কি হবে এ নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট মতামত দেয়া হয়নি। এটি নিউইয়র্কে বর্তমানে একটি বেশ বড় একটি সমস্যার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৫। মালমো
শান্তির দেশ সুইডেন। বর্জ্য পুনঃব্যবহারের মাধ্যমে দেশটি পৃথিবীর অন্যতম পরিচ্ছন্ন দেশ হিসেবে আখ্যা পেয়েছে। কিন্তু দেশটির আরো একটি রেকর্ড রয়েছে, যা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। সুইডেনের মালমো শহর রয়েছে গ্রেনেড বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে দুনিয়ার শীর্ষে। গ্রেনেড বিস্ফোরক সেখানে খুবই সস্তা, রাস্তাঘাটে কিনতে পাওয়া যায়। ২০১৭ তে মালমোতে মোট ২০টি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়েছে। অবিস্ফোরিত হিসেবে আবিষ্কার করা হয়েছে আরো ৩৯টি ! সেখানে এত বেশিমাত্রায় গ্রেনেড বিস্ফোরণ রেকর্ড করা হয়েছে যে, তাতে দেখা যায় পুলিশ স্টেশনগুলোও তা থেকে নিরাপদ নয়। বেস কয়েকবার স্বয়ং নিরাপত্তারক্ষী পুলিশরাই স্বীকার হয়েছেন বিস্ফোরণের!