.
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সমঝোতার নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার দু:শাসনের শিকার হন শেয়ারবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। আওয়ামী লুটেরা চক্র শেয়ারবাজার থেকে লুটে নেয় এক লাখ কোটি টাকা। এই লুটপাট নিয়ে লোক দেখানো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছি। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মোহিত গণমাধ্যমে প্রকাশ্যেই বলেছিলেন শেয়ারবাজার লুটপাটের তদন্তে উঠে আসা লুটেরাদের নাম প্রকাশ করা হবে না। তবে সাধারণ মানুষ জানেন এই লুটেরারা সকলেই শেখ হাসিনার আশির্বাদপুষ্ট এবং তাঁর কাছের মানুষ।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে দুই বার শেয়ারবাজারে হরিলুট হয়েছে। ১৯৯৬ এবং ২০০৯-২০১০ সালে। দুটো ঘটনাই ঘটেছে শেখ হাসিনার শাসনামলে। ১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজার থেকে লুট করে নেয়া হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। এবং ২০০৯ এবং ২০১০ সালের মধ্যে শেয়ার বাজার থেকে লুটে নেয়া হয়েছে প্রায় এক লক্ষ হাজার কোটি টাকার বেশি। যা বাংলাদেশের এক সময়ের বাজেটের সমপরিমাণ বলা চলে। লুটপাটের এই টাকার বেশিরভাগই পাচার হয়েছে দেশের বাইরে।
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর শেয়ারবাজারে ভয়াবহ লুটপাটের ঘটনা ঘটে। লুটপাটের সঙ্গে তৎকালীন বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খানদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপ, সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো, বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের মালিকানাধীন সিএমসি কামাল টেক্সটাইল মিলস নানা অনিয়ম আর কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিপুল এই অর্থ হাতিয়ে নেন।
২০০৯ সালে ফের ক্ষমতায় আসার পর তারা লুটপাটের কলঙ্কের দাগ মোচনের কোনো চেষ্টা তো করেইনি; বরং ১৯৯৬ সালের চেয়ে আরও বড় ধরনের কেলেঙ্কারি আর লুটপাটের রেকর্ড গড়ে আওয়ামী লীগ। দেশের শেয়ারবাজারে এতো বড় লুটপাট ও দুর্নীতির ঘটনা ঘটলেও আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবাহী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করেছে।
২০০৯-১০ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ শেয়ারবাজার লুটপাটের ঘটনা ঘটে। মার্কেট থেকে তুলে নেওয়া হয় প্রায় এক লক্ষ হাজার কোটি টাকা। পথে বসিয়ে দেয়া হয় প্রায় ৩৩ হাজার বিনিয়োগকারীকে। অর্থ হারানোর শোকে অনেক বিনিয়োগকারী আত্মহত্যা করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তার দ্বিতীয় মেয়াদের ক্ষমতা দখলের দিন থেকেই শেয়ার বাজার মেনিপুলেশন শুরু হয়।
১৯৯৬ সালের পুনরাবৃত্তি হবে না, এমন আশ্বাস দিয়ে সাধারণ মানুষকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে প্রলুব্ধ করে অবশেষে তার চেয়ে আরও বড় কেলেঙ্কারির মাধ্যমে তাদের সব পুঁজি লুটে নেয়। লাভের আশায় সাধারণ মানুষ সঞ্চিত অর্থের পাশাপাশি, বিভিন্ন উৎস থেকে ধার করে, জায়গা জমি বিক্রি কিংবা লিজ দিয়ে, স্ত্রীর অলঙ্কার বিক্রি করে, ব্যবসার মূলধন ভাঙিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু লাভ তো দূরে থাকুক পুঁজিটুকুও তারা ফিরে পাননি। আর পুঁজি হারিয়ে মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন অনেকে। শেয়ারবাজারে সর্বস্ব খুইয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন অনেক বিনিয়োগকারী।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রেসিডেন্ট হিসাবে বসানো হয় শেয়ারবাজারে বহুল বিতর্কিত ও আলোচিত রকিবুর রহমানকে। ১৯৯৬ সালের কেলেঙ্কারির ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে তিনি ব্যাপকভাবে আলোচিত। শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠ ও শেখ হাসিনার বিশেষ আস্থাভাজন হিসাবে পরিচিত ছিলেন। রকিবুর রহমান ‘শেখ রাসেল শিশু-কিশোর’ নামে একটি সংগঠনের প্রেসিডেন্টও ছিলেন। তিনি ডিএসই'র প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরই শুরু হয় শেয়ারবাজার ঘিরে নানা পরিকল্পনা। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথম বছর (২০০৯ সালে) সাধারণ মানুষদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলতে নেয়া হয় নানা উদ্যোগ এবং তার পরের বছর অর্থাৎ ২০১০ সালে শুরু হয় শেয়ারবাজার লুটের ঘটনা। নানা উপায়ে, আইনের দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ও কারসাজির মাধ্যমে লুটপাট করা হয় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পুঁজি।
শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধসের পর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি নানা অনিয়মের জন্য এসইসি চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকারকে দায়ী করে তার অপসারণের সুপারিশ করে। অপরদিকে রকিবুর রহমান ও সালমান এফ রহমান পুঁজিবাজার লেনদেন ও প্রভাব বিস্তারের বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছিল। শেখ হাসিনার অনুগত ব্যক্তিদের মাধ্যমে তদন্তেই উঠে এসেছিল শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠরাই শেয়ারবাজার থেকে লুটে নিয়েছে সাধারণ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পুঁজি। শেখ হাসিনার দু:শাসনের শিকার শেয়ারবাজার আজো নড়বড়ে অবস্থায় মানুষের আস্থা ফিরাতে পারেনি।
উৎসঃ আমার দেশ