
ছবি-সংগৃহীত
ভারত থেকে রেলপথে বাংলাদেশে পণ্য আমদানিতে একরকম ধস নেমেছে। ডলার সংকটে ব্যবসায়ীরা এলসি করতে না পারায় রাজস্ব আয়ও নেমে গেছে অর্ধেকে। এতে অনেক ব্যবসায়ী দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, ডলার সংকটে ব্যাংকে শত ভাগ টাকা জমা দেয়া তাদের জন্য কঠিন। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ছোট ও মাঝারি মানের ব্যবসায়ীরা। এলসি করার পর তিন থেকে চার মাস পর পণ্য দেশে আসছে। ব্যাংক থেকে লোন নিলে সুদের হার যায় বেড়ে। এ অবস্থায় ডলার সংকট নিরসন না হওয়া পর্যন্ত ভারত থেকে পণ্য আমদানি করা প্রায় অসম্ভব।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, রেলপথ দিয়ে পণ্য আমদানি বাড়ানো সম্ভব না হলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে। দেশে বর্তমানে প্রায় বন্ধ রয়েছে উন্নয়নমূলক কাজ। সাধারণত এসব কাজে পাথরের ব্যবহার হয় বেশি। গতবারের তুলনায় এ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ও প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ও খরচ কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা রেলপথেই পণ্য আমাদনিতে বেশি আগ্রহী হন। এজন্য ভারত থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলপথ দিয়ে মালবাহী ওয়াগনে ব্যবসায়ীরা নিয়মিত পণ্য আমদানি করতেন। দ্রুত সময়ে পণ্য আমদানি ও খালাসের পর নির্দিষ্ট স্থানে চাহিদামতো সরবরাহ করাও সম্ভব হতো। অনেক ব্যবসায়ী আমদানি পণ্য নির্দিষ্ট এলাকায় নিয়ে খালাস করতেন।
ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে তাদের চাহিদামত পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। কিছু ব্যবসায়ী অল্প পরিসরে পণ্য আমদানি করলেও অনেকে দেউলিয়া হয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার অবস্থা।
মালবাহী ওয়াগন কম আসায় শ্রমিকরা অল্প সময়ে পণ্য খালাসের পর ট্রাকে লোডিং করছেন। এতে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন রেল ইয়ার্ডে কর্মরত অনেক শ্রমিক। ভাড়া না থাকায় ট্রাক মালিকদেরও গুনতে হচ্ছে লোকসান। এক রকম অলস সময় পার করছেন ট্রাক চালক ও হেলপাররা। নিয়মিত মালবাহী ট্রেন আসছে না দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনে।
দেশে উন্নয়নমূলক কাজ প্রায় বন্ধ থাকায় পাথর আমদানি হচ্ছে কম। আগে যেখানে প্রতি মাসে ২৫-৩০ রেক পাথর আমদানি হতো ভারত থেকে, এখন সেখানে হচ্ছে ৪-৫ রেক। পাথরসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি বৃদ্ধি পেলে কর্মচাঞ্চল্য বেড়ে যাবে বন্দরে।
দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলপথ দিয়ে গত ১০ মাসে পণ্য আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৬২ হাজার ৯৮৩ মেট্রিক টন। আর রাজস্ব আয় হয়েছে ৪৬ কোটি ৮৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এক সময় ভারতে চিটাগুড় রফতানি হলেও এখন তা বন্ধই বলা চলে!
ভারত থেকে মালবাহী ওয়াগনে করে চাল, ভুট্টা, পাথর, পেঁয়াজ, চায়না ক্লে (মাটি), ফ্লাই এ্যাশ ইট, জিপসামসহ বিভিন্ন পণ্য আমাদনি করেন ব্যবসায়ীরা। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪২৭ রেকে (মালবাহী ট্রেন) ১৭ হাজার ৭৩৬ ওয়াগন পণ্য আমদানি হয়েছে। আয় হয়েছে ৪৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরে (২০২১-২০২২) মোট ৭০৯টি রেকে ৩২ হাজার ৪৭৪ ওয়াগন পণ্য আমদানি হয়েছে।