
নিজস্ব ছবি
আজ থেকে দেশের সকল আদালতে যদি মামলা গ্রহন করা বন্ধও করে দেয়া হয়, এখন পর্যন্ত যে সকল মামলা বিচারাধীন আছে তা নিষ্পত্তি করতে আমাদের ৩০ বছর লাগবে।
শুক্রবার সমালে বরগুনা পৌরসভা মিলনায়েতনে বিআইএমএস এর একটি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন। শালিশ ব্যবস্থ্যার মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি সংক্রান্ত একটি সভার আয়োজন করে বিআইএমএস।
বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ মো: আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এর বিচারক মো. আশরাফুল কামাল] আজ (৩ ফেব্রুয়ারী ২৩) বরগুনা পৌরসভা মিলনায়তনে সকাল ৯ ঘটিকায় এ অনুষ্ঠানের অধিবেশন শুরু হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বরগুনা জেলার বিমস এর আহবায়ক ডা. মনিজা। তিনি বলেন, মামলার বিপরীতে মিডিয়েশন হচ্ছে একটি শক্তি, যা হৃদয়ে ধারন ও লালন করতে হয়। অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন বিমস এর চেয়ারম্যান সিনিয়র এ্যাডভোকেট সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী। তিনি বলেন, শান্তিময় সমাজ গড়তে মিডিয়েশন অবদান রাখতে পারবে। আমার বিশ্বাস বিমস মিডিয়েশনে অন্যতম ভুমিকা রাখবে। দেশে প্রচুর প্রচুর মিডিয়েশনার দরকার তাই আমি আশা করবো আপনারা আমাদের সাথে থেকে কাজ করবেন। বক্তব্য রাখেন এ্যাড. পঙ্কজ কুমার খন্দু। তিনি বলেন, দুটি পক্ষ যখন কোন জামেলায় জড়িয়ে পরে তখন মামলা করতে গেলে এ্যাডভোকেটগন তাদের কথা ঠিক মতো শুনেন না এবং বিচারকের কাছে গিয়েও তাদের আকুতি বলার সুযোগ হয় না। কিন্তু মিডিয়েশন হলে সবার সকল কথা দীর্ঘ সময় নিয়ে শুনে সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করা সম্ভব। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মেয়র এ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে মিডিয়েশন নিয়ে যাওয়া দরকার এবং এটার সুফল তারা কিভাবে পেতে পারে তারই ব্যাবস্থা করা হবে। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এর সিনিয়র এ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার তানিয়া আমির। তিনি বলেন, মিডিয়েশন সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় আদালতের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা কাজ করে মিডিয়েশন। যেখানে আদালতে এক পক্ষে রায় চলে যায় সেখানে মিডিয়েশনের মাধ্যমে দুই পক্ষই সুবিধা পেয়ে থেকে, এখানে কোন রায় এক পক্ষকে চাপিয়ে দেয়া হয় না। বরগুনা পৌরসভার মেয়র এ্যাড. কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নই ছিলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। আমরা বুঝি এবং বিশ্বাস করি মানুষের জন্য আইন, আইনের জন্য মানুষ নয়। আর মানুষের জন্য আইন প্রয়োগে মিডিয়েশন একটি অন্যতম ভুমিকা পালন করে। বরগুনার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুব আলম বলেন, আমরা ভাবি আদালতের বিপরীতে কিছু একটা দার করানো উচিত যেটার মাধ্যমে মামলা না করে সমঝোতা করা যায়। আমি মনে করি এসব ক্ষেত্রে বিমস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি আরো বলেন, যেহেতু এই প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত বেশি লোকই আইনজীবী সেহেতু এটা সঠিক ভাবেই পরিচালিত হবে মনে করি। বরগুনার পুলিশ সুপার মো. আব্দুস ছালাম বলেন, মিডিয়েশনের মাধ্যমে দুই পক্ষকেই জেতানো সম্ভব যা মামলায় সম্ভব না। তাই আমাদের সমাজে মিডিয়েশন থাকা গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। নারী ও শিশু অপরাধ দমন ট্রাইবুনাল এর বিচারক মশিউর রহমান খান বলেন, আমরা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে যেগুলো সম্ভব আপোষের চেষ্টা করি। তিনি আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনার চেষ্টা করবেন মক্কেল আসলে মামলা না করে দুই পক্সকে মিলিয়ে দেয়ার। এক্ষেত্রে আদালতের উপরে চাপ টা ও একটু কমবে। প্রধান অথিতির বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারক মো. আশরাফুল কামাল, তিনি বক্তব্যের শুরুতেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বরগুনায় আসতে পারার জন্য। তিনি বলেন আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলো বরগুনায় আসবো, আজকে আমার সেই ইচ্ছা পূরন হয়েছে, আমি অত্যন্ত আনন্দিত এখানে মানুষের সাথে মিশতে পেরে। তিনি আরো বলেন, আমরা সততার সাথে, ন্যায় নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছি। দেশে মামলা যে পরিমান বেড়ে গেছে তাতে দ্রুত বিচার করা সম্ভব নয় তাই বিকল্প ব্যাবস্থা থাকা দরকার। তিনি আরো বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোয় মামলা নাই বললেই চলে, সে দেশের কারাগারে রেস্টুরেন্ট করা হচ্ছে, ফুলের বাগান করা হচ্ছে কারন সেখানে আসামি নাই। যে দেশেও আছে সেখানে মামলা হলেও ১ মাসের মধ্যে বিচার হচ্ছে। কিন্তু আমরা কি মামলাবাজ দেশ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছি, আমাদের দেশে কেন এতো মামলা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কিছু মামলা দেখে হাস্যকর মনে হয়, ২/৫ হাজার টাকার মামলা হচ্ছে, চেকের মামলা হচ্ছে এগুলোর জন্য মিডিয়েশন প্রয়োজন। তিনি ইয়াং জাজ এবং আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা মামলাবাজ না হয়ে মিডিয়েটর হোন, তাহলে মামলা কমে যাবে সমাজের উন্নত হবে, দেশের উন্নত হবে। সাংবাদিক, পুলিশ, আইনজীবী, বিচারপতি প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই আমাদের মিডিয়েটর লাগবে। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সাবেক জেলা জজ বেগম রোকসনা পারভীন, কমিউনিটি মিটিয়েশন সেন্টার এর চেয়ারম্যান সেলিনা সোবহান খানম, বিমস এর এম্বাসেডর আমিয়া প্রাবন চক্রবর্তী, বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এ্যাড. সঞ্জীব কুমার দাস, বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাড. নজরুল ইসলাম সিকদার