
প্রতীকী ছবি
সম্প্রতি চট্টগ্রামে ৫ বছর বয়সী শিশু আলিনা ইসলাম আয়াতকে শ্বাসরোধে হত্যার পরে মরদেহ ৬ টুকরো করে সাগরে ফেলে দেয়া হয়। নিখোঁজের ১০ দিন পর দুজনকে আটক করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই জানায়, নিখোঁজ শিশুর সন্ধানে একই বাড়ির ভাড়াটিয়া আবির ও তার বন্ধু হাসিবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। আবির জানায়, মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে আয়াতকে অপহরণের চেষ্টা করেছিল। সে সময় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে শিশুটির মৃত্যু হয়। এরপর ইপিজেড থানা এলাকায় মরদেহ ৬ টুকরো করে আউটার রিং রোড এলাকায় সাগরে ফেলে আসে। ১৯ বছর বয়সী আবির আলী ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রল’ আর ‘সিআইডি’ দেখে যে লোমহর্ষক অপরাধ কৌশল শিখেছে, সেটারই প্রয়োগ করেছে ওই ছোট্ট শিশুটির ওপর। সেই লাশ প্যাকেটে মুড়িয়ে আরেক বাসায় নিয়ে কেটে ৬ টুকরা করে। এরপর আলাদা-আলাদা প্যাকেটে ভরে ৩টি টুকরো ফেলে সাগরে আর নালায়। চলতি বছরের জুন মাসে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে চাঞ্চল্যকর ৭ বছর বয়সী শিশু ইফতেকার মালেকুল মাসফি হত্যার ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত ২ শিশু গ্রেপ্তারসহ আলামত উদ্ধার করেছে পিবিআই। মাসফিকে হত্যার মাত্র পাঁচ মাস আগে চরণদ্বীপ দরবার শরীফের আল্লামা শাহ অছিয়র রহমান মাদ্রাসা হেফজখানা ও এতিমখানায় ভর্তি করিয়েছিল তার পরিবার। শিশুটি ওই মাদ্রাসার হেফজখানার আবাসিকে থেকে লেখাপড়া করতো।
পিবিআই জানায়, গত ৫ই মার্চ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মাদ্রাসার শিক্ষক জাফর আহাম্মদ বাদীর বাড়িতে গিয়ে জানান, ইফতেকারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন তার অভিভাবক ও আত্মীয়স্বজন দ্রুত মাদ্রাসায় পৌঁছে অনেক খোঁজাখুঁজি করে সকাল সোয়া ৮টার দিকে মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলায় স্টোর রুমে দক্ষিণ কোনায় কম্বল ও তোষক দিয়ে মোড়ানো গলাকাটা রক্তাক্ত অবস্থায় ভিকটিমের মৃতদেহ পান। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত দুই শিশু গত ১৯শে জুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। অপরদিকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দুই শিশু আদালতে ইফতেকারকে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়। গত অক্টোবর মাসে চট্টগ্রামে ১০০ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে এক শিশুকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়। ঘটনার দিন বিকাল ৪টা ৪৩ মিনিটে ১০০ টাকা দেয়ার লোভ দেখিয়ে ডেকে গোডাউনে নিয়ে যান। সেখানে শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়। রক্তপাত হতে থাকলে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন লক্ষণ। চট্টগ্রামে নালা থেকে উদ্ধার মৃত শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। এতে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে স্থানীয় দোকান কর্মচারী লক্ষণ দাশকে।
জিজ্ঞাসাবাদে সে দায় স্বীকার করে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মরদেহ যে বস্তায় ছিল তাতে টিসিবির সিল দেখে আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গত ১০ মাসে সারা দেশে ৪৩৯টি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০৪ জনের বয়স ৬ বছরের নিচে, ৭৯ জনের বয়স ৭ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। ৯৭৫ জন শিশুর ওপর নানা ধরনের সহিংসতা হয়েছে। এগুলো শুধু পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের হিসাব। বাস্তবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে দাবি সংস্থাটির। এ বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সাবেক নির্বাহী পরিচালক মানবাধিকারকর্মী শীপা হাফিজা বলেন, আমাদের সমাজে, ঘরে, প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রে শিশুদেরকে ধমকানো, বকা দেয়া, মারা এগুলো খুব সহজ। যৌন হয়রানির বিষয়টি এখানেই একাত্মভাবে জড়িয়ে আছে। একটি শিশুকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করা খুব সহজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, শিশু নির্যাতনের ক্ষেত্রে হয় তার পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী থেকে শুরু করে নিজেদের গণ্ডির মধ্যে এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পিতামাতার সম্পর্কের অবনতি এবং পরিবারের ওপর রোষানলের বলি হয় শিশুরা। এক্ষেত্রে শিশুর পরিবারের সদস্যদের শিশুর প্রতি অধিক যত্নবান হওয়া, সতর্ক থাকা এবং সঠিক সময়ে বিচার নিশ্চিত হলে এ ধরনের সামাজিক অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানান তিনি।
উৎস: মানবজমিন