Banglar Chokh | বাংলার চোখ

সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে নিয়েছে সিআইডি

সৈয়দ মোস্তাক আহম্মেদ, বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:২৪, ২৯ মার্চ ২০২৩

সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে নিয়েছে সিআইডি

সাংবাদিক শামসুজ্জামান

সাভারের বাসা থেকে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিরুদ্ধে।

আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজু মন্ডল বুধবার   জানান, ঢাকা থেকে যাওয়া সিআইডির একটি দল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কাছে আমবাগান এলাকার ভাড়া বাসা থেকে শামসুজ্জামানকে আটক করেছে।

 এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির ঢাকা মেট্রো ও ঢাকা বিভাগীয় উপ-মহাপরিদর্শক ইমাম হোসেন   বলেন, 'আমাদের কোনো দল ওই এলাকায় অভিযান চালায়নি, কাউকে তুলেও নেয়নি। অন্য কোনো দল অভিযান চালিয়েছে কি না, সে সম্পর্কেও আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।'

দুই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ভোর ৪টার দিকে তিনটি গাড়িতে করে মোট ১৬ জন শামসুজ্জামানের বাড়ির সামনে যায়। তাদের মধ্যে সাত-আটজন বাড়িতে প্রবেশ করে। একজন শামসুজ্জামানের বসার ঘরে তল্লাশি চালিয়ে তার ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, দুটি মোবাইল ফোন ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে যায়। সেখানে ১০-১৫ মিনিট থাকার পর তাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় নিয়ে যাওয়া হয়।

ঘটনার সময় শামসুজ্জামানের বাসায় ছিলেন স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'তারা দ্বিতীয়বার বাড়ি এসে জব্দকৃত মালামালের তালিকা তৈরি করেন। শামসুজ্জামানকে জামাকাপড় নিতে বলা হয়। এ সময় কক্ষে দাঁড়িয়ে তার ছবি তোলা হয়। ৫-৭ মিনিটের মধ্যে তারা আবার বের হয়ে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন ওই বাড়িতে তল্লাশির সময় দুবারই উপস্থিত ছিলেন।'

একটি সূত্র জানায়,ভোর চারটার দিকে তিনটি গাড়িতে মোট ১৬ জন পুলিশ সদস্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের শামসুজ্জামানের আমবাগানের বাসায় যায়। তাঁদের মধ্যে ৫ জন বাসায় ঢোকে।
 একজন বাসার একটি ব্যাগ খালি করে সেই ব্যাগে একটি ল্যাপটপ, দুইটো মুঠোফোন ও একটি পোর্টেবল হার্ডড্রাইভ নেয়। এরপর শামসুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে ৭-৮ মিনিটের মধ্যে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। 

পরে গাড়ি তিনটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় যায়। সেখানে নুরজাহান হোটেলে সাহরি সম্পন্ন করেন তাঁরা। পরে ভোর পাঁচটার দিকে নম্বরপ্লেটহীন একটি গাড়ি শামসুজ্জামানকে নিয়ে ঢাকার দিকে চলে যায়। 

আর দুইটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-চ ৫৬-২৭৪৭ এবং ঢাকা মেট্রো-জ ৭৪-০৩৩১) আবার বাসার সামনে গিয়ে ১৫ মিনিটের মতো অবস্থান নেয়। সাড়ে পাঁচটার দিকে এই গাড়ি দুটিও চলে যায়।

বাসা থেকে তুলে নেওয়ার সময় বাসার মালিককে ডাকেন পুলিশের এক কর্মকর্তা। এ সময় পুলিশ জানায়, শামসুজ্জামানের করা একটি প্রতিবেদনের বিষয়ে রাষ্ট্রের আপত্তি আছে। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে নেওয়া হচ্ছে।

পুলিশের এই সদস্যরা নিজেদের সিআইডির লোক হিসেবে দাবি করেন। এই ১৬ জনের মধ্যে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক রাজু ছিলেন। 

শামসুজ্জামানকে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার সময় আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক রাজু মন্ডল উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। বিষয়টি জানতে রাজু মন্ডল ও আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম কামরুজ্জামানের ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা কল ধরেননি। ঢাকা জেলার (সাভার সার্কেল) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলাম  বলেন, 'সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে নেওয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।'

শামসুজ্জামান ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল করিমের ছোট ভাই।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়