ঢাকা, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

ফিনল্যান্ডের স্বাধীনতা দিবসে রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা

জামান সরকার, হেলসিঙ্কি (ফিনল্যান্ড) থেকে

প্রকাশ: ১৬:১৯, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

ফিনল্যান্ডের স্বাধীনতা দিবসে রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা

ছবি -বাংলার চোখ

শীতল উত্তরের আকাশ, তুষারভেজা বাতাস আর হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এক গভীর আবেগ—এই আবহেই ফিনল্যান্ড উদযাপন করলো তার ১০৮তম স্বাধীনতা দিবস। ১৯১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর রুশ সাম্রাজ্যের শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা এই দেশটির কাছে দিনটি কেবল একটি রাষ্ট্রীয় দিবস নয়—এটি আত্মপরিচয়, আত্মমর্যাদা ও গণতান্ত্রিক চেতনার এক অনন্ত প্রতীক।

দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টুব ও তাঁর সহধর্মিণী সুজান্নে ইন্নেস-স্টুবের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণে রাজধানী হেলসিঙ্কির ঐতিহাসিক প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীনতা দিবসের ঐতিহ্যবাহী রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা। এবছর এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন বিশিষ্ট অতিথি।

আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফিনল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্টরা, সংসদের স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীপরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদের সব রাজনৈতিক দলের এমপিরা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা, শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, বেসামরিক প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ক্রীড়াবিদ, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, শিল্পী ও সমাজের কৃতী ব্যক্তিত্বরা।

এই সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ যেন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে এক রাজকীয় আবেশে মোড়া স্বপ্নপুরী হয়ে ওঠে। ঐতিহ্যবাহী ফিনিশ পোশাক থেকে শুরু করে আধুনিক ইউরোপীয় ডিজাইনের গাউন ও স্যুটে সজ্জিত অতিথিরা যেন এক একটি জীবন্ত শিল্পকর্ম। অনেক পোশাকের মূল্য লক্ষ ইউরোর ঘর ছাড়িয়েছে—তবে এটি ফিনিশ সংস্কৃতি ও নান্দনিকতার অংশ।

এই পোশাকশিল্পে ছিল অতীতের ঐতিহ্য, বর্তমানের রুচি এবং ভবিষ্যতের নকশার এক অনন্য মেলবন্ধন। পুরো হেলসিঙ্কি শহর সেজে ওঠে আলোর রোশনাই আর ফুলের অলংকরণে। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের ঝলমলে আলোকসজ্জা দূর থেকেই জানিয়ে দেয়—এটি একটি স্বাধীন দেশের গর্ব।

রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনায় অতিথিদের জন্য পরিবেশিত হয় ফিনল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী সামুদ্রিক মাছ, হরিণের মাংস, আধুনিক ইউরোপীয় খাবার ও বিখ্যাত ফিনিশ ডেজার্ট। পাশাপাশি দেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের পরিবেশনায় ছিল সংগীত, নৃত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামরিক স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে পালিত হয় নীরবতা ও শ্রদ্ধার মুহূর্ত—স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মরণে।

ফিনল্যান্ডের মানুষের কাছে এই দিনটি কেবল একটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান নয়—এটি একটি অনুভূতি, একটি দায়বদ্ধতা ও একটি শপথের দিন। যুদ্ধবিধ্বস্ত অতীত পেরিয়ে আজ যে দেশটি শান্তি, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তায় বিশ্বে অনন্য—স্বাধীনতা দিবসের এই উৎসব সেই অর্জনের গৌরবময় সাক্ষ্য।

শীতের দীর্ঘ অন্ধকার রাতেও ফিনল্যান্ড প্রমাণ করে—স্বাধীনতার আলো কখনো নিভে না।


 

আরও পড়ুন