
লোগো
পহেলা ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলা-২০২৩। মেলার জন্য ইতিমধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে স্টল। বরাদ্দ অনুযায়ী স্টল নির্মাণকাজ চলছে পুরোদমে। কিন্তু বইমেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি স্টল বরাদ্দের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে নাম নেই ‘আদর্শ প্রকাশনী’র। ২০১০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি বইমেলায় স্টল বরাদ্দ পেয়ে আসছে। ভালো কিছু বই প্রকাশের জন্য খ্যাতিও রয়েছে প্রকাশনাটির। রকমারির বেস্ট সেলার বইয়ের তালিকায়ও রয়েছে আদর্শের বই। কিন্তু এমন একটি প্রতিষ্ঠান স্টল বরাদ্দ না পাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমিকে ঠিক কী কারণে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়নি তা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটিকে জানায়নি। বিষয়টি নিয়ে হতাশ লেখক-প্রকাশক থেকে শুরু করে পাঠকরাও।
অনেকে জানতে চেয়েছেন আদর্শ প্রকাশনী নিষিদ্ধ কোনো প্রকাশনা কিনা?
বাংলা একাডেমির এ সিদ্ধান্তকে ভিন্নমত দমন বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বাংলা একাডেমি যেন আদর্শকে স্টল বরাদ্দ দেয় সে দাবিও তাদের। জানা গেছে, আদর্শের তিনটি বই নিয়ে বাংলা একাডেমির কাছে অভিযোগ দিয়েছেন কয়েকজন প্রকাশক। বই তিনটি হলো- জিয়া হাসানের ‘উন্নয়ন বিভ্রম’, ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের ‘অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবনীয় কথামালা’ এবং ফাহাম আব্দুস সালামের ‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ এক প্রতিক্রিয়ায় লেখেন, বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে নেয়া এ সিদ্ধান্তের (আদর্শকে স্টল বরাদ্দ না দেয়া) একটি ব্যাখ্যা যে কেউ দাবি করতে পারেন। বাংলা একাডেমি জনগণের অর্থে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা হয়েছে ‘ভিন্নমত’-এর কারণেই। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রতিষ্ঠান তৈরির দাবি উঠেছিল, প্রতিষ্ঠা হয়েছিল যুক্তফ্রন্ট সরকারের সময়। ভাষা আন্দোলনের ভিত্তি হচ্ছে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে ভিন্নমত-বাংলা ভাষার মর্যাদার প্রশ্নে ভিন্নমত। বাংলা একাডেমি এখন সেই ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
ভিন্নমতের কারণে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলে, তা হবে সেন্সরশিপের সবচেয়ে প্রত্যক্ষ উদাহরণ। ফ্যাক্ট চেকার কদরুদ্দীন শিশির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখেন, আদর্শ এবং অন্য যে প্রকাশনীকে মেলায় স্টল দেয়া হয়নি তাদের পক্ষে ফেসবুকে কথা বলার পাশাপাশি ওদের এক দুইটা বই অর্ডার দিন। এইটা ইফেক্টিভ প্রতিবাদ হবে। আমি আদর্শ থেকে তিনটা অর্ডার করেছি। ‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’, ‘উন্নয়ন বিভ্রম’ ও ‘অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবনীয় কথামালা’। কালকেই হাতে পাবো।’ এদিকে যে তিনটি বই নিয়ে আপত্তি রয়েছে তার একটির লেখক ফাহাম আব্দুস সালাম আদর্শকে স্টল বরাদ্দ না দেয়া হতাশা প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক প্রতিক্রিয়ায় লেখেন, ‘আদর্শ’ বাংলাদেশের একটি প্রধান প্রকাশনী সংস্থা। প্রতিষ্ঠানটিকে বইমেলায় স্টল বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না। কারণ দেখিয়েছে যে, তারা আমার বই পাবলিশ করেছে। আমি ‘আদর্শ’কে অনুরোধ করবো তারা যেন আমার বই স্টলে না রাখে এবং বাংলা একাডেমিকে অনুরোধ করবো তারা যেন এই শর্তে আদর্শকে স্টল দেন।
এ বিষয়ে আদর্শ প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহবুব রহমান বলেন, ঠিক কী কারণে আদর্শকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়নি তা বাংলা একাডেমি আমাকে অফিসিয়ালি কিছু জানায়নি। কারণ তাদের মধ্যে গোঁজামিল রয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত স্টল বরাদ্দের তালিকায় আদর্শের নাম না পেয়ে আমি বাংলা একাডেমিতে যাই। সচিবের কাছে কারণ জানতে চাইলে তিনি তার অধস্তন এক কর্মকর্তার কাছে যেতে বলেন। কিন্তু সে কর্মকর্তা আমাকে জানান তার কাছে এ বিষয়ের কোনো নথি নেই। এরপর আমি মহাপরিচালকের (ডিজি) কাছে বিষয়টি জানতে চেয়ে চিঠি দেই। কিন্তু উত্তর পাইনি। সর্বশেষ সোমবারও চিঠি দিয়েছি। তবে ডিজি মৌখিকভাবে আমাকে জানিয়েছেন, ‘তোমার বইতে ভিন্নমতের প্রতিফলন হওয়ায় আমরা স্টল বরাদ্দ দিতে পারি না’। অন্যদিকে স্টল বরাদ্দের কমিটিতে প্রকাশকদের প্রতিনিধি যারা ছিলেন তাদের একজন আমাকে জানিয়েছে তিনটি বইয়ের কারণে আমাকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়নি। মাহবুব রহমান বলেন, এ বিষয়ে তিনি আজ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)’তে সংবাদ সম্মেলন করবেন। এরপর হাইকোর্টে রিট করবেন
উৎস: মানবজমিন