Banglar Chokh | বাংলার চোখ

সাগরদাঁড়ির মধুমেলায় বেজায় ভীড়

মালিকুজ্জামান কাকা, যশোর থেকে

প্রকাশিত: ০১:০৮, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩

সাগরদাঁড়ির মধুমেলায় বেজায় ভীড়

ছবি-সংগৃহীত

যশোর শহর থেকে অনেক দূরে
মহাকবি ঘুমিয়ে কপোতাক্ষ নদের তীরে 
২০০-৫০০ বছর বয়স নিয়ে নয় ওর ভাবনা
অবাধ্য ডানপিটে খোকা তাই বাংলার প্রেরনা
প্রতিবছর নিজের সন্তানকে আজো স্মরণ বাংলায়
মেলা হয় তাই মায়ের ডাক খোকা খুকু আয় আয়
ডাক নাম হয়ে গেছে মধূসুদন পরিচয় ওর মধু মেলা
সকলেই ঐক্যমতে; বাঁচাতে হবে কপোতাক্ষে মায়া
পাখি নদী নৌকা কৃষক আর যত মানুষ খেটে খাওয়া 
তুমি আমি সবুজ বলয় পাখি, এসো গড়ি মধু আঙিনা
হিন্দু মুসলিম নয় সর্ব বাঙালী হেথা ধর্মে বাঁধা মানিনা
প্রকৃতির ছোয়ায় যদি ফেরে তার রুপ মেলা হবে ফি বছর
লক্ষ্য আরো যেন সেথা না লাগে কালিমার দাগ নষ্ট আঁছড়।
যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি যেন এখন উৎসবের আঙিনা। পথে পথে ব্যানার, ফেস্টুন আর আলোকসজ্জা। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কপোতাক্ষ নদের তীরে শুরু হয়েছে সপ্তাব্যাপী এই মধুমেলা।
করোনায় গত দুই বছর মধুমেলা হয়নি। তাই এ বছর কপোতাক্ষ নদের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার মধুভক্তের উপস্থিতিতে জমে উঠেছে মেলার প্রাঙ্গণ। শুধু যশোর নয়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকেও দর্শনার্থীরা ঘুরতে আসছেন এ মধুমেলায়। বুধবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড় শুরু হয় মেলায়।
যশোর থেকে বন্ধুদের নিয়ে মধুমেলায় ঘুরতে আসা আজিজুল ইসলাম জানান, প্রথমবার মধুমেলায় ঘুরতে এসেছি। এর আগে ২০২০ সালে আসার ইচ্ছা ছিল কিন্তু আসতে পারিনি। এরপর দুই বছর মেলা হয়নি। এবার আসার সুযোগ হয়েছে। মধুকবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এত সুন্দর আয়োজন, সত্যি আমরা গর্বিত যে আমরা ঐতিহ্যবাহী যশোর জেলার বাসিন্দা। মেলার স্টল ও জিনিসপত্র দেখে অনেক ভালো লাগছে।
সাতক্ষীরা থেকে পরিবার নিয়ে মধুমেলায় এসেছেন জামিল শেখ। তিনি জানান, এখানকার পরিবেশ ও কবির স্মৃতিবিজড়িত পুরাতন বাড়িটি দেখলে কবিকে অনুভব করি। কবির জন্মস্থানে তার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মধুমেলা, আসলে এটার কোনো তুলনা হয় না।
এবারের মধুমেলায় ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নাটোর, নড়াইল, খুলনা, রাজশাহী থেকে আগত প্রায় তিন শতাধিক ব্যবসায়ী বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন। মেলার এ সকল দোকানগুলোতে বাহারি রকমের মিষ্টি, বাংলা খাবার, চাইনিজ খাবার ছাড়াও নানা ধরনের মুখরোচক খাবার বিক্রি হচ্ছে। শুধু তাই নয় কসমেটিকসসহ বিভিন্ন প্রসাধনীর দোকানও বসেছে। কসমেটিকসের দোকানগুলোতে নারীদের উপচে পড়া ভিড়।
কিশোরগঞ্জের কসমেটিকস ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান জানান, এর আগেও মধুমেলায় এসেছি। গত দুই বছর মেলা হয়নি তাই আসতে পারিনি। গতকাল রাত থেকেই বেচাকেনা জমজমাট। দিন যত যাবে দূর-দূরান্তের দর্শনার্থীদের চাপও বাড়তে থাকবে। সেই সঙ্গে বেচাকেনাও বাড়বে।
মধুমেলার মিষ্টি ব্যবসায়ী অমৃত মল্লিক জানান, এবারের মধুমেলায় মিষ্টির দোকানের সংখ্যাই বেশি। বাহারি রকমের মিষ্টি তৈরি করে নিয়ে এসেছি। তবে এবার তেল, চিনি, আটা ও ময়দার দাম বৃদ্ধি হওয়ায় মিষ্টির দামও কিছুটা বাড়তি।
মধুমেলায় দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সার্কাস, যাদু প্রদর্শনী ও ‘মৃত্যুকূপ’ থাকছে। রয়েছে শিশুদের জন্য নাগরদোলাসহ বিভিন্ন আয়োজন। এছাড়াও থাকছে কৃষিমেলা। মধুমেলায় সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে সব ধরনের ব্যবস্থা। আগামী ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে ঐতিহ্যবাহী এ মধুমেলা।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়