
ছবি-সংগৃহীত
ভয়ংকর বায়ুদূষণের কবলে পড়েছে ঢাকা শহর। শনিবার থেকে বুধবার টানা পাঁচ দিন বিশ্বের শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকায় স্থান করে নেয় বাংলাদেশের রাজধানী।
সাধারণত দিনের শুরুতে দূষণের মাত্রা বেশি থাকে। সূর্য যতই গোধূলির দিকে যেতে থাকে, দূষণের মাত্রাও ততই কমে যায়।
কিন্তু বুধবার সকাল থেকে রাত অবধি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, দূষণের শহরের তালিকায় শীর্ষস্থানের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।
এমনকি রাতে যেখানে দূষণ কমে আসার কথা, সেখানে উলটো বেড়েছে। সার্বিকভাবে ঢাকার বাতাসে দূষণ সহনীয় মাত্রার চেয়েও পাঁচগুণ বেশি।
বিশ্বে বাতাসের দূষণ নিয়ে যেসব সংস্থা কাজ করে, সেগুলোর মধ্যে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) অন্যতম। সংস্থাটির সকাল ১০টা ১৮ মিনিটের রিয়েল টাইম (তাৎক্ষণিক) দূষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ২৭৬ মাইক্রোগ্রাম দূষণ নিয়ে একনম্বরে অবস্থান করে ঢাকা। এরপর দুপুর ১টা, বিকাল ৪টা ও ৫টা এবং সন্ধ্যা ৬টা ও রাত ৮টায় ঢাকা শীর্ষে অবস্থান করছিল। দুপুর ১টায় বাতাসে দুষিত ধূলিকণার পরিমাণ ছিল ২৫৩ মাইক্রোগ্রাম, বিকাল ৪টায় ২৪৩ এবং ৫টায় ছিল ২৩২ মাইক্রোগ্রাম। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টায় তা বেড়ে আবার ২৪০ মাইক্রোগ্রাম হয়েছে। আর রাত ৮টায় তা আরও বেড়ে ৩২৪ হয়েছে, যা সহনীয় মাত্রার চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বেশি। সাধারণত প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ৬৫ মাইক্রোগ্রাম ধূলিকণা ও গ্যাসীয় পদার্থকে সহনীয় মাত্রা হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
উল্লিখিত একিউআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুধবার সারা দিনই ঢাকা দূষণে শীর্ষস্থান ধরে রাখলেও একই সময়ে দ্বিতীয় থেকে পরবর্তী স্থানগুলোয় অন্য শহরের ওঠানামা দেখা গেছে। সকাল ১০টার দিকে ১৯৭ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল পাকিস্তানের করাচি। তৃতীয় অবস্থানে ছিল উজবেকিস্তানের তাসখন্দ (স্কোর ১৯৪)। এছাড়া চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে ছিল ভারতের কলকাতা এবং নেপালের কাঠমান্ডু। দুপুর ১টায় দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম স্থানের শহরগুলো হচ্ছে-পাকিস্তানের লাহোর, ইরাকের বাগদাদ, ভারতের দিল্লি ও কলকাতা। বিকাল ৪টার দিকে লাহোর, তাসখন্দ, কলকাতা ও দিল্লি উঠে আসে। বাগদাদ চলে যায় ষষ্ঠ স্থানে। বিকাল ৫টায় লাহোর, দিল্লি, কলকাতা ও মুম্বাই ছিল দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম স্থানে। আর সন্ধ্যা ৬টায় দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম স্থানে থাকা শহরগুলো হলো-লাহোর, বাগদাদ, তাসখন্দ ও কলকাতা। মুম্বাই এ সময়ে ষষ্ঠ স্থানে চলে গেলেও শীর্ষ ১০টি দূষণের শহরের মধ্যে দিল্লি ছিল না।
বায়ুবিজ্ঞানীদের মতে, বায়ু পরিমাপের সূচকে প্রতি ঘনমিটারে ধূলিকণাসহ অন্যান্য গ্যাসীয় দূষণ ৬৫ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত অনুমোদিত। অর্থাৎ, এই পরিমাণ দূষণ থাকলে সেই বায়ু শরীরের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত স্কোর থাকলে তা ভালো বায়ুমান হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এভাবে ৫১-১০০ স্কোর হলে তা মোটামুটি, ১০১-১৫০ পর্যন্ত সতর্কতামূলক, ২০১-৩০০-এর মধ্যে থাকলে সেই মাত্রাকে খুবই অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর ৩০১-এর বেশি স্কোরকে বলা হয় বিপজ্জনক বায়ু। এই হিসাবে বুধবার সারা দিন চরম মাত্রার অস্বাস্থ্যকর বায়ুর মধ্যে ছিলেন ঢাকার নাগরিকরা।