ড.মুহাম্মদ ইউনূস
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস এএফপিকে বলেছেন, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো তাকে মিথ্যাভাবে দুর্নীতির জন্য অভিযুক্ত করেছে কারণ তিনি আদালতে একাধিক মামলা লড়ছেন। বিষয়টির নিন্দা জানিয়ে তিনি একে "শক্তিশালী মহল" কর্তৃক চালিত সংঘবদ্ধ অপপ্রচার বলে আখ্যায়িত করেছেন।
নিজের অগ্রগামী ক্ষুদ্র-ঋণ ব্যাংকের মাধ্যমে লাখো কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করার কৃতিত্ব দেওয়া হয় ৮৩ বছর বয়সী ইউনূসকে। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রতি ক্ষিপ্ত। তিনি তাকে দরিদ্রদের "রক্ত চোষা"র জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
রাষ্ট্র-চালিত মিডিয়া, নিউজ ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং ইসরাইলকে আর্থিক সাহায্য করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে এটি একটি 'ফ্ল্যাশপয়েন্ট ইস্যু'। কারণ, বাংলাদেশ দেশটিকে স্বীকৃতি দেয় না।
এএফপিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইউনূস বলেন, "আমি নাম বলতে চাই না, তবে এগুলো শক্তিশালী মহল কর্তৃক সমর্থিত বলেই আমার বিশ্বাস"। স্পষ্টভাবে ওইসব প্রতিবেদনগুলোকে অস্বীকার করেছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
২০০৭ সালে রাজনীতিতে সংক্ষিপ্ত যাত্রার পর বাংলাদেশি বিষয়গুলো নিয়ে ইউনূস খুব কমই মন্তব্য করে থাকেন। দৃশ্যত সমন্বিতভাবে মিডিয়া ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বারবার দুর্নীতির অভিযোগের কারণেই তিনি মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান।
ইউনূস বলেন, "সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন পেইজ এবং ওয়েবসাইটগুলোর একটি নেটওয়ার্ক আমরা দেখতে পেয়েছি যেগুলো আমাকে লক্ষ্য করে বিকৃত ছবি এবং ভিডিও সহ অসংখ্য মিথ্যা এবং বানোয়াট বিষয়বস্তু তৈরি করে থাকে। তারা এমনকি আমার নামে মিথ্যা উদ্ধৃতিও দেয়।
জানুয়ারির শেষের মধ্যে সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন ৭৬ বছর বয়সী হাসিনা। লৌহ মুষ্টি দিয়ে বাংলাদেশকে শাসন করার জন্য তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির সবচেয়ে সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত বছর হাসিনা প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের বিশাল সব সমাবেশ দেখা গেছে।
সরকার বিরোধী সাম্প্রতিক গণবিক্ষোভে একজন পুলিশ নিহত হওয়ার পর হত্যার অভিযোগে শীর্ষ নেতৃত্ব সহ শত শত জ্যেষ্ঠ বিরোধী দলীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন ইউনূসের বিরুদ্ধে স্মিয়ার ক্যাম্পেইনকে "অসম্মানজনক" অভিহিত করে বলেন, সরকার "বিরোধপূর্ণ কণ্ঠস্বরকে দমন করেছে।
আমেরিকানদের সাথে ভালো সম্পর্কের কারণে ইউনূস উল্লেখযোগ্য টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমেরিকানরা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।"
হাসিনার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা (চট্টগ্রামের সাবেক সিটি মেয়র) আ জ ম নাছির উদ্দিন উদ্ধৃত করেছে বাংলাদেশি মিডিয়া। তার দাবি ইউনূস ইসরাইলকে ১০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছেন।
ওই মন্তব্য সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে নাসিরকে অনুরোধ করা হলে তিনি তার কোনো জবাব দেননি।
বাংলা ইনসাইডার ওয়েবসাইটের রিপোর্ট বলছে, কথিত ওই অনুদানের তথ্য ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি থেকে পাওয়া। তবে, ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এএফপিকে বলেছে যে এমন কোনো বিবৃতি দেওয়া হয় নি।
বাংলা ইনসাইডার এর সম্পাদক সৈয়দ বোরহান কবির নিজের রিপোর্টের বিষয়ে আর কোনো তথ্য দেন নি। ইউনূস সেটিকে "ভুয়া খবর" বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
ইউনূস বলেন, "এই আশায় আমি ওই ধরনের প্রচারণাগুলোকে উপেক্ষা করেছিলাম যে এগুলো নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গুজব ও অপপ্রচারণা অভূতপূর্ব মাত্রায় বেড়ে গেছে।"
বিচারিক হয়রানি
গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন ইউনূস। গ্রামের কোটি কোটি নারীকে স্বল্প পরিমাণ অর্থ ঋণ হিসেবে প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের চরম দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়তা করার কৃতিত্ব দেওয়া হয় গ্রামীণ ব্যাংককে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দরিদ্রদের সেবা প্রদানের জন্য নিজের প্রতিষ্ঠিত সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সম্পর্কিত ফৌজদারি আদালত ও শ্রম আদালতের পৃথক ১৭৫ টি মামলার লড়াইয়ে তিনি এখন জর্জরিত।
ইউনূসের আইনজীবীরা বলছেন, সব অভিযোগ থেকেই তিনি নির্দোষ। মামলাগুলোকে তারা সরকারি হয়রানি বলে নিন্দা জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার একটি মামলার জন্য ইউনূস আদালতে হাজির হন যেটিতে তার বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে ছয় মাস পর্যন্ত জেলে থাকতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন সহ ১৬০ জন বিশ্ব ব্যক্তিত্ব ক্ষুদ্র-ঋণের অগ্রদূতের বিরুদ্ধে "নিরবিচ্ছিন্ন বিচারিক হয়রানির" নিন্দা জানিয়ে গত আগস্ট মাসে একটি যৌথ চিঠি প্রকাশ করেছেন। ১০০ জনেরও বেশি নোবেল বিজয়ী সহ ওই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা বলেছেন যে তারা "তার নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা" নিয়ে ভীত।
সূত্র:এএফপি