প্রতীকী ছবি
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে ‘রাজনৈতিক প্রাণ’ ফিরে পেয়েছে বিএনপি। সারা দেশে সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছে দলটি। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টার্গেট সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চা। এজন্য দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় জোর দিচ্ছেন দলের নেতারা। বর্তমান পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীরা যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে না পড়েন সেজন্য মাঠে নেমেছে দলটির তিন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন। হাইকমান্ডের নির্দেশে নেতাকর্মীদের আরও জবাবদিহির আওতায় আনতে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে যৌথ কর্মিসভা শুরু করেছেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। একইসঙ্গে দলীয় প্রতীক ধানের শীষের প্রচার-প্রচারণায় নেমেছে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী প্রেক্ষাপটে দেশের বিভিন্ন স্থানে লুটপাট ও দখলবাজির অভিযোগ ওঠে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এসব ঘটনায় বিব্রত বিএনপি হাইকমান্ড। এরই প্রেক্ষাপটে বহিষ্কারও হন কয়েকশ নেতাকর্মী। প্রথম থেকেই দুর্নীতি, লুটপাট, দখল ও নির্যাতন-নিপীড়নের বিষয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বার্তা দেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও দলীয়শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থানও নেন তিনি। আগামী দিনগুলোতে দলীয় নেতাকর্মীদের আরও বেশি সতর্ক রাখা ও জবাবদিহির আওতায় আনতে এখন সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছেন শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। তারই প্রাথমিক অংশ হিসাবে সারা দেশে যৌথ কর্মিসভা শুরু করেছে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। ভবিষৎ বাংলাদেশের রাজনীতি ও জনগণ নিয়ে তারেক রহমানের যে বার্তা তা দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে পৌঁছে দেবেন সংগঠনের নেতারা।
এদিকে শনিবার থেকে যৌথ কর্মিসভা শুরু করেছে জাতীয়তাবাদী দলের তিন সংগঠন। ‘আমরা যদি থাকি সৎ-দেশ সংস্কার সম্ভব’ স্লোগান নিয়ে সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঝালকাঠিতে প্রথমদিন সভা করেছেন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা। এছাড়াও আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা, সংগঠনকে শক্তিশালী করা, সাংগঠনিক কাঠামো যাচাই-বাছাই করা এবং দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কঠোর বার্তা তৃণমূলে পৌঁছাবেন তারা। পাশাপাশি তৃণমূলের নেতা এবং বিএনপির কাছে সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা কী, এ বিষয়েও জনগণের মতামত নেবেন তিন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। এদিকে আজ থেকে জেলায় দলের নির্বাচনি প্রতীক ধানের শীষ সংবলিত লিফলেট বিতরণ করবেন তারা। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জেলাও যৌথ কর্মিসভা ও লিফলেট বিতরণ করবে ৩ সংগঠন। তবে এবারের লিফলেটে শুধু ধানের শীষ প্রতীক ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ছাড়া কোনো লেখা কিংবা নেতার ছবি থাকছে না। নেতারা বলেন, যৌথ কর্মিসভার পরে সংশ্লিষ্ট জেলার থানা পর্যায়ে ধানের শীষ লিফলেট বিতরণ হবে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে-দলকে তৃণমূল পর্যায়ে জনসম্পৃক্ত করা। দেশ ও জনগণকে নিয়ে বিএনপির চিন্তাধারা গণমানুষের মধ্যে শেয়ার করা।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন শনিবার বলেন, সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবেই মাঠে নেমেছে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। আমাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ও লক্ষ্য আগামী নির্বাচনের দিকে। এটাই গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্য। তিনি বলেন, এখন যারা সরকারে আসছেন, তারা নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন। জনগণের অধিকার ও গণতন্ত্র পুণঃপ্রতিষ্ঠায় তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জনগণের প্রধান অধিকার হচ্ছে ভোটের অধিকার। আশা করি, যত দ্রুত সম্ভব এই সরকার নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে বিদায় নেবে। সেজন্যে আমার এই সরকারকে সমর্থন দিয়েছি, এখনো দিচ্ছি এবং অতি দ্রুত নির্বাচনের দাবি করছি। সেই সঙ্গে আমাদের দল ও অঙ্গ-সংগঠন সাংগঠনিক ও নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা জানান, বিগত ১৫ বছরে এ দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তরুণ প্রজন্ম ভোটার হয়েও ভোট বিমুখ। অনেকেই ব্যালট পেপার কিংবা ব্যালটে ধানের শীষ প্রতীক দেখেননি। এখন বিএনপির টার্গেট তরুণ ভোটারদের উজ্জীবিত করে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে সুস্থ ধারার রাজনীতির চর্চা করা। গতানুগতিক রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনেও জোর দিচ্ছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এজন্য সারা দেশে নতুনভাবে সংগঠনিক শক্তি সঞ্চয়ে বিভিন্ন উপায়ে মাঠে নেমেছেন দলটির নেতারা। এছাড়াও রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে নির্বাচনের বিকল্প দেখছেন না তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আগামী নির্বাচন খুবই গুরুত্বর্পূণ। নির্বাচনের দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট না থাকলেও বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোও দ্রুত সময়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এজন্য সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে বিএনপির। ধানের শীষের লিফলেট এটা একটা নির্বাচনি প্রস্তুতির সংকেত।
যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন বলেন, আমরা প্রথমে বিভাগীয় কর্মসূচি করেছি, এখন জেলায় জেলায় যাচ্ছি। আমাদের নেতাকর্মীরা যাতে সংযত থাকে। মূলত কোনো বিশৃঙ্খলায় যাতে না জড়ান এবং প্ররোচিত হয়ে যাতে অপরাধ না করতে পারেন। শৃঙ্খলায় নেতাকর্মীদের সতর্ক করার পাশাপাশি রাজনীতিতে একটা গুণগত পরিবর্তন আসুক এটা আমরা চাই। আগে কোথাও গেলে শত শত মোটরসাইকেল, গাড়িবহর রিসিভ করত। যা সাধারণ মানুষের জন্য কষ্টের কারণ হতো, জনভোগান্তি হতো। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যাতে এসব না হয় সে বিষয়ে আমরা সচেতনতা বৃদ্ধি করছি। বিনা কারণে ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে এলাকা ছেয়ে দেওয়া, পার্টি অফিস ঢেকে দেওয়ার যে প্রবণতা, আমরা সেখান থেকে বের হয়ে আসছি।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান বলেন, তিন সংগঠনের যৌথসভার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে-রাজনীতি সম্পর্কে নেতাকর্মীদের আগে যে ধারণা ছিল, সেই ধারণা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক না। স্বাধীনতার মূল চেতনা-সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে রাজনীতি দরকার, আমরা সেই রাজনীতি চর্চা করতে চাই। বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাজনীতির যে দর্শন, সেই সম্পর্কে এই নতুন রাজনীতিতে নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ ও সচেতন করা হবে। যারা জনগণের মন জয় করতে পারবে, তারাই এই দেশে সুনামের সঙ্গে রাজনীতি করতে পারবে। তিনি বলেন, দলীয় শৃঙ্খলার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কঠোর নির্দেশনা আছে। ছোট কিংবা বড় কোনো অন্যায়কে বিএনপি কিংবা তার অঙ্গ সংগঠন ছাড় দেবে না।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, যৌথ কর্মিসভায় নেতাকর্মীদের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বার্তা দেওয়া হবে। নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধরতে হবে। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত যে ষড়যন্ত্রগুলো হচ্ছে, এগুলো মোকাবিলা করে মাঠে থাকতে হবে। মাঠে দু-একটি বিশৃঙ্খলা ঘটছে, সেখান থেকে নেতাকর্মীরা যেন সচেতন থাকে, নিজেদের বিরত রাখে এবং অভ্যন্তরীণ বিভাজন না ঘটে, এসব বিষয়ে দলের নির্দেশনা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে জনগণের প্রত্যাশার কথাগুলো বিএনপিকে অবহিত করা হবে।