
১৯৫২ এর সেই মহান ভাষা আন্দোলনে যারা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ছিলো?তারা কেউই রাজনৈতিক কর্মী ছিলো না শাহাদাত এর আগ পর্যন্ত! আর পিলখানার শহীদ আর বিডিআর এর নাম পরিবর্তন এটাও পিলখানা বিদ্রোহের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো না!রাষ্ট্র ভাষা বাংলা স্বীকৃতি পেলেও ইংরেজি বা অন্য ভাষার গুরুত্ব বেশী!তেমনি পিলখানার বিদ্রোহের হোতাদের চিহ্নিত করার চাইতে বিডিআর এর নাম পরিবর্তন গুরুত্ব বেশী পায়?আবার গনতন্ত্রের মুল বিষয় হলো শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালিত, গণমাধ্যম, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের শাসন, রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত সেবকদের জবাবদিহি ও নিরপেক্ষতা? কিন্তু আজ রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশে কতটুকু আছে এ প্রশ্ন যখন কেউ করে তার সঠিক জবাব দেওয়া অসম্ভব হয়ে পরে!দেশের সর্ববৃহত্তম রাজনৈতিক দল আর তাদের নেতৃত্বাধীন জোটের ঠেকানো রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত সেবকদের একটা বড় অংশের দায়িত্ব এমনটি দেশপ্রেমিক জনগনের ধারণা! ঠিক তেমনি বিডিআর বিদ্রোহের সাথে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করার চাইতে বিডিআর এর নাম পরিবর্তন বেশী গুরুত্ব পায়? প্রথম রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিয়ন্ত্রণ এর বিষয়টা পর্যবেক্ষক মহল কোন দৃষ্টিতে দেখছেন আর তার শেষ পরিনতি কি এটা তুলে ধরার চেষ্টা করবো!দেশের স্বাধীনতা, গনতন্ত্র, বহুদলীয় গনতন্ত্র ও সংসদীয় গনতন্ত্র, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার অধিনে ভোটারের ভোট প্রদানের অধিকার নিশ্চিত করা, গণমাধ্যমকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেওয়া,বিচার বিভাগ স্বাধীন ভাবে মেরুদণ্ড সোজা করে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা,রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গুলোকে জবাবদিহির ভিতরে আনার চেষ্টা, উন্নয়ন মুল দৃষ্টি জনগনের অর্থ ব্যয় হবে উন্নয়নে তবে,এই উন্নয়নের সাথে রাষ্ট্রের এই অর্থ বা ঋন যাদের পরিশোধ করতে হবে, তাদের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা থাকবে!যারা সরকারের সমালোচনা করবে তারা পুরস্কৃত না হলেও জুলুমের স্বীকার হবে না এমন নিশ্চয়তা থাকবে! এটাই ছিল বিএনপি ও তার নেতৃত্বাধীন জোটের মূল লক্ষ।অথচ পর্যবেক্ষক মহলের দৃষ্টিতে গত ১৩-১৪ বছর চরিত্রবানদের চরিত্রহীন হিসাবে ফরমাইস রায় কার্যকর হয়!দুর্নীতিবাজদের পক্ষে জনগনের প্রতিনিধি দাবীদাররা সাফাই স্বাক্ষীদেয়!নারী নির্যাতনকারী আর শ্লীলতাহানির পর আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা অপরাধ হিসাবে গন্য হয় না!সর্বস্তরের দুর্নীতি আর স্বজনপ্রিতী দলীয় করণের মাধ্যমে এলাকায় এলাকায় অশান্তি সৃষ্টির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়! এটার নাম গনতন্ত্র না ফ্যাসিবাদ এ প্রশ্ন জনমনে দেখা দিয়েছে আর এটাই স্বাভাবিক কি?আদালত দেশের কোন নাগরিক এর বক্তব্য প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী কি প্রমাণ করে?আর যদি তা কোন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা হয়,তাহলে তখন কি বলা হবে,এ সব নানা প্রশ্ন উঠা অস্বাভাবিক কি?দেশের তিন তিনবারের নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং সবচাইতে জনপ্রিয় নেত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিতে নাই!অথচ যে মামলায় সাজা হয়েছে, ঐ এ্যাকাউন্টের বেগম খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর নাই!টাকাও ব্যাংকে জমা, তারপর ঐ টাকার জন্য মামলা! যারা রাষ্ট্রকে কল্যানের জ্ঞান দান করে,তারা আটক হলে জামিন পায় না!গনমাধ্যম কর্মীদের নামে মামলা গ্রেফতারে সময় বেশী লাগে না!আর আটক হলে জামিন সময়ের ব্যাপার!বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন(বিএফইউজে)সাবেক সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা অসুস্থ সাংবাদিক নেতা রুহুল আমীন গাজী একবছরে অধিক সময় কারাগারে!শুনা যায় একবার জামিন হলেও চেম্বার জজ বাতিল করে দেন?এখন প্রশ্ন হলো শাসকের বিরুদ্ধে সমালোচনা কি রাষ্ট্রদ্রোহী হয়! আর রাষ্ট্রদ্রোহ কি কি করলে হয় এটাও পরিস্কার হওয়া দরকার? অথচ সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যার প্রতিবেদন ৮৫ বার সময় বৃদ্ধি হয়েছে!১৭৫৭ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ইংরেজ আর দেশীয় তাবেদার বা পরগাছাদের সাথে লড়াই করে, যখন স্বাধীনতা অর্জন হয়!তখন বাংলাদেশ একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে মুক্ত হয়।১৯৭১ এর মহান স্বাধীনতার জন্যে যারা বুকের তাজা রক্তদেয় তার প্রায় ৯৮%পার্সেন্ট মুসলমান। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে ইসলামকে রাষ্ট্রের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করানো হয় কার স্বার্থে এ প্রশ্ন এখন জনমনে?বাংলাকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠা পরিবর্তে অপসংস্কৃতি আর সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকেই বা অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার পিছনে এমন কি রহস্য?উত্তর বঙ্গের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য ক্ষমতাচ্যুত ভাইসচ্যান্সেলর হঠাৎ এক অনলাইন টিভি সাক্ষাৎকারে সেভেন সিস্টারে ট্রাক ভরা অস্ত্র পাচার,ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা সীমান্ত এলাকা নজরদারি রাখছে!এটা বলার পিছনে কোন রহস্য নিহিত কিনা তার উপর গুরুত্ব আরোপ করে জিজ্ঞাসাবাদ এমন ধারণা ছিলো জনতার?কিন্তু তা তো হয়নি বরং তারমত অযোগ্য ব্যাক্তি নির্বাচন কমিশন হওয়ার স্বপ্ন দেখে? একজন পর্যবেক্ষক বললেন রাষ্ট্র যখন দুষ্টের লালন আর সৃষ্টের দমননিতী অনুসরণ করে তখন স্বার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পরার সমুহ সম্ভব না দেখা দেয়? এখন বাংলাদেশের কয়েকটি সংস্হার উপর মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে? এতে পশ্চিমা বিশ্বের বেশ কিছু রাষ্ট্র সহমত প্রকাশ করছে!কিন্তু যাদের স্বার্থ রক্ষায় এই সকল প্রতিষ্ঠান নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়েছে! তাদের ব্যাপারে মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ বা পশ্চিমাদেশ কেমন ভুমিকা নেমে পর্যবেক্ষক মহলের কাছে তা পরিস্কার নয়!এদিকে বাংলাদেশের সাধারণ জনগন মনে করে মিয়ানমার, ইন্ডিয়া ও ইসরাইল এর উপর নিষেধাজ্ঞা আর বাংলাদেশের অনির্বাচিত সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন এর লক্ষে সর্বোচ্চ ব্যবস্হা গ্রহণ করলে যুক্তিক হতো!পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত হচ্ছে বাংলাদেশে দুটি ধারা রাজনীতি প্রচলন আছে!একটি ধারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী তারা ক্ষমতায় থাক আর ক্ষমতার বাইরে থাক,তারা মিথ্যাচার আর রাষ্ট্রকে পরগাছা বানাতে গিয়ে জনগনের বুকের উপর জগদ্দল পাথর বসিয়ে দেয়। আর একটা স্বাধীনতা রক্ষার অঙ্গিকারে বিশ্বাসী!তারা জাতির মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, বাক-ব্যক্তি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, আইনের শাসন,ন্যায় বিচার,রাষ্ট্রের বেতনভুক্তদের জবাবদিহির মধ্যে রাখতে আত্মবিশ্বাসী? তবে তারা তাদের বিশ্বাস প্রতিষ্ঠায় মধ্যমপন্হা অবলম্বন করায় মিথ্যাদায় তাদের কাঁধে নিতে হয়।আজ যখন মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র সহ তাদের মিত্ররা বাংলাদেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে,তখন গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে পর্যবেক্ষক মহল দেখছে জাতিয় ঐক্য? কিন্তু চেতনায় বিশ্বাসীদের কাঁধে বন্দুক রেখে ফায়ার করতে সাবেক ভিপি আর সাবেক মন্ত্রীর ছেলেকে দিয়ে একটা দল গঠন করিয়ে, তাদের অদৃশ্য শক্তি হিসাবে চরম মুসলিম বিদ্ধেষী মোসাদ"র"আর চীন সাহায্য করে চলছে!এ সব কানাঘুষা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নাই! এখনোই উচিৎ ক্ষমতাসীনদের পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। আর প্রতিপক্ষদের উচিৎ হবে শহীদ জিয়া উর রহমান বিএনপি গঠনের সময় যে নেতৃবৃন্দকে দলটি প্রতিষ্ঠা করছিলেন,আর বেগম খালেদা জিয়া যাদের নিয়ে জোট করে ছিলেন, তাদেরকে সক্রিয় করা?আর বৈদেশিক নীতি হতে হবে সকলই বাংলাদেশের বন্ধু! কেউ প্রভু নয়!মুসলিম বিশ্বের ঐক্য আর সার্ক সক্রিয় করা তাহলে বাংলাদেশকে অকার্যকর করার চক্রান্ত মুখ থুবড়ে পড়বে এমন ধারণা জনতার?আজ মনে রাখতে হবে তিন দিকে শক্র বেষ্টিত আর একদিকে বঙ্গোপসাগর। আর তিনদিকের মজলুম, নিপীড়িত মানুষ গুলো তখনই মৌলিক ও মানবাধিকার ভোগ করে,যখন এই দেশে গনতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় থাকে।আর গনতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আনতে জোটবদ্ধ ভাবে রাজপথে নামার কোন বিকল্প নাই?মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বলেছিলেন পিন্ডি থেকে রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে দিল্লির দাসত্ব বা পরগাছা হওয়ার জন্যে নয়। আজ ৫০ বছর পর মজলুম জননেতার সেই দিকনির্দেশনা ছাড়া জাতির মুক্তি অসম্ভব।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক,কলামিষ্ট.বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক এ্যাসোসিয়েশন(বিআরজেএ) চেয়ারম্যান
বাংলার চোখ