Banglar Chokh | বাংলার চোখ

ছোট্ট থেকে উঠে আসা চন্দ্রা রহমানের হাঁড়িবাহারী ও শৈল্পিক কারুপণ্য

কর্পোরেট

বিলকিস আক্তার সুমি, সিলেট থেকে

প্রকাশিত: ০১:৩৬, ৭ মার্চ ২০২৪

সর্বশেষ

ছোট্ট থেকে উঠে আসা চন্দ্রা রহমানের হাঁড়িবাহারী ও শৈল্পিক কারুপণ্য

চন্দ্রা রহমান

আমি নারী আমি সব পারি।একজন চন্দ্রা রহমান ঘর সাজান বাহির ও সাজান কে বলে নারীরা কিছু  পারেনা নারী সব পারে। চন্দ্রা রহমানের মতো নারীরা ঘরে বসে হাজার হাজার  টাকা ইনকাম করছে  স্বামী চন্দ্রা রহমান বিজনেস পেইজ হাঁড়িবাহারী ও শৈল্পিক কারুপণ্য-।
আমি ছোটবেলা থেকেই রান্নার প্রতি  দুর্বলতা ছিল।
তাই বেশ ছোটবেলা থেকেই রান্নার হাতে খড়ি আমার মায়ের কাছেই।
সিলেটের এমসি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স মাষ্টার্স করেছি।
অনার্স পড়াকালীন সময়ে আমি সরকারি ভাবে সেলাই প্রশিক্ষণ দেই। মাষ্টার্স পড়াকালীন সময়ে বিয়ে হয়।
মাষ্টার্স শেষ করার পর সরকারী চাকুরীর চেষ্টা করি।বেসরকারি কোনও কিছুতেই চেষ্টা আর করিনি। সংসার বাচ্চা সামলিয়ে দিন শেষ এই ভেবে খারাপ লাগতো যে এতো লেখাপড়া করে কি করলাম।কিছুই তো করতে পারলাম না।
মাঝেমধ্যে মনে হতো ইস্ ঘরে বসে যদি কিছু করা যেতো।তাহলে ঘর ও সামলানো হলো আর নিজের হাত খরচ টাও আসলো।
কিন্তু কিভাবে কি করতে হয় তা জানতাম না।
২০২০ সালের কথা।উই নামে উইমেনস ই কসার্স ট্রাস্ট এ আমাদের এক বন্ধু হাসান আমাকে এড পাঠায়।আমি ২০ সালের মে মাসের ৩১ তারিখে জয়েন করি।
দেখি মেয়েদের পোস্ট।কেউ হোমমেইড খাবার নিয়ে,কেউ কাপড় নিয়ে। তাছাডা বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্যবাহী পন্য নিয়ে কাজ করছেন। উই গ্রুপ হচ্ছে দেশীয় পণ্যের গ্রুপ।
এগুলো দেখে দেখে বেশ কয়েকদিন পর আমিও পোস্ট করতে শুরু করলাম। 
তারপর বড়ো মেয়ের মাধ্যমে প্রথমে ফুডি নাম দিয়ে পেইজ খুলি। ২/৩ মাস পেইজ চালানোর পর দেখলাম এটা নাম আরও অনেকেরই আছে।তারপর ভিন্ন ধর্মী নাম দিয়ে হাঁড়িবাহারী পেইজ খুললাম। 
সেপ্টেম্বর মাসে আমার প্রথম সেল হয়।প্রথম কাস্টমার আমাদের বন্ধু মিজান উদ্দিন জামিল।
মাত্র ৪০০ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলাম।
২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪/৫ টি সেল হয়েছিলো।
 ২০ সালের ডিসেম্বরের ২৩ তারিখ কক্সবাজার চলে যাই ৬ মাসের জন্য। মাঝখানে বিজনেস বন্ধ ছিলো ২/৩ মাস।মে মাস থেকে আবার চালু হয়। তখন প্রায় ১ সাথে প্রায় ৩ টি ডেলিভারি দেই ১০ হাজার টাকার সামুদ্রিক শুঁটকিমাছ।
এখনও চলছে এই সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি।
কক্সবাজার থাকাকালীন মনিপুরী জুম শাড়িও ডেলিভারি দিয়েছি। 
তাছাড়া শাড়ির মধ্যে  টাঙাইলের শাড়ি, সুতির ব্লকের থ্রিপিচ, মনিপুরী গামছা,বাগুড়ার হ্যান্ডলুম উলের চাদর ইত্যাদি ছিলো। 
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি তে ৫ দিনের একটা ট্রেণিং দেই সিলেটের উইমেনস চেম্বার থেকে ফাস্টফুডের উপর। 
তারপর দ্বিতীয় ট্রেণিং দেই ফুড এন্ড বেভারেইজ এর উপর  টনি খান হোটেল ম্যানেজ মেন্ট ইন্সটিটিউট থেকে। সেই থেকে আমার খাবার নিয়ে কাজ শুরু করা।বিভিন্ন ধরনের হারিয়ে যাওয়া শুকনো খাবার নিয়ে কাজ করছি।নারিকেল নাড়ু,  দুধের সন্দেশ, বালাচাও, বিভিন্নধরনের ফলের আচার। তাছাডা সিলেটের ঐতিহ্যবাহী দুটি আচার হচ্ছে, সাতকরার আচার ও নাগামরিচের আচার।
রান্না করা খাবার যেমন পোলাও রোস্ট, খিচুড়ি এগুলোও আছে।
তাছাড়া আছে সিজনাল খাবার যেমন- রাজশাহীর খেজুরের গুড়,রাজশাহীর আম,বান্দরবানের পাহাড়ি তেতুল,বরই।
আর আছে সিলেটের বাগানে স্পেশাল ক্লোন টি।
তারপর একে একে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অধিনে বন্ধন সোসাইটি সপ্তাহখানিকের ট্রেনিং দেই ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে।তাছাড়া টনি খান থেকে লেভেল ওয়ানের কোর্স করেছি।
২০২৩ সালের আগষ্ট মাসে আবারও বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অর্থায়নে সুশিলনে ট্রেণিং দেই কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরনের উপর।৭ দিন সিলেটে এবং ১ দিন ঢাকার গাজিপুরে কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটে সারাদিন ব্যাপি ট্রেণিং সম্পন্ন করি।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে আরম্ভ হয়েছে ব্রাক ইউনিভার্সিটি থেকে AWE ট্রেণিং।  এই ট্রেণিং  ইউ এসএ এম্বেসির একটা ট্রেণিং। 
Academy For Women Entrepreners(AWE)
   এতদিন অনলাইনে করেছি প্রতি বুধবারে। ২০২৪ সালের মার্চের ৫,৬,৭ তারিখে ব্রাক লার্নিং সেন্টারে  পীরের বাজার অনুষ্টিত হবে ৩ দিনের অফলাইনের ট্রেণিং। সেখানে আমাদের আবাসিকের সুবিধা আছে।
যেহেতু খাবার নিয়ে কাজ করছি তাই সবাই বেশির ভাগই রিপিট কাস্টমার এবং রেগুলার কাস্টমার। অর্ডারের সংখ্যা প্রায় ৫০০ এর মতো। 
এই পর্যন্ত অনলাইনে ১০/১২ লাখ টাকার পণ্য মানে খাবার বিক্রি হয়েছে।
আমার উদ্যোগ শুরৃর সময় অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।আমার পরিবার থেকে যদিও তেমন বাধা আসেনি তবুও মাঝেমধ্যে ঝামেলায় পড়তে হতো।আমার কাজে সাহায্য  করেছেন আমার স্বামী ও বড়ো মেয়ে।আর সবচেয়ে বড়ো উৎসাহ দাতা ছিলেন আমার বাবা।তারপর ভাই, বোন।পরিবারের সহযোগীতা না পেলে আমি এই পর্যন্ত আসতে পারতাম না।
এখন ও কিছুই না।আমাকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়