.
দীর্ঘদিন ধরে দেশে ডলার সংকট চলছে। সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এরপরেও সংকট সমাধান হচ্ছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আইএমএফ’র বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ বিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ৯৪৫ কোটি ডলারের ঘরে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চায়ন স্থির হয়েছে ২৪.৮১ বিলিয়ন ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২১শে মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবায়নে সঞ্চিত বিদেশি অর্থের পরিমাণ ছিল ২৫.২৪ বিলিয়ন ডলার। আর আইএমএফের গণনা পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী তা ছিল ১৯.৯৮ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে গত ১ সপ্তাহে গ্রস রিজার্ভ কমেছে ৫৩ কোটি ডলার।
দেশের আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণকারী সর্বোচ্চ সংস্থার নিট রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে। এটি শুধু আইএমএফকে দেয়া হয়, প্রকাশ করা হয় না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই মেথডে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন প্রায় সাড়ে ১৭ বিলিয়ন ডলার। এ দিয়ে ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। প্রতি মাসে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার হিসেবে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে কষ্টসাধ্য হবে বাংলাদেশের জন্য। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন শেষ প্রান্তে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হল বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ।
তথ্য অনুযায়ী, বিপিএম-৬ অনুযায়ী গত ৬ই মার্চ রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৯.৪৫ কোটি ডলারে। অর্থাৎ ২১ দিনে বিপিএম-৬ হিসাবে কমেছে ১৬৯ কোটি ডলার। অপরদিকে ৬ই মার্চ গ্রোস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৬৩৪ কোটি ডলার। ২৭শে মার্চ এ রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৮১ কোটি ডলারে। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ কমেছে ১৫২ কোটি ডলার।
আইএমএফের নতুন শর্ত অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে প্রকৃত রিজার্ভ রাখার কথা ১ হাজার ৭৭৮ কোটি ডলার। মার্চে তা ১ হাজার ৯২৬ কোটি ডলার ও জুনে ২ হাজার ১০ কোটি ডলারে উন্নীত করতে হবে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সময়ে বাণিজ্যিক কিছু ব্যাংক থেকে এক বিলিয়ন ডলারের মতো কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক, যার পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলারের মতো।
এর আগে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১৩.৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল। আর আগের অর্থবছরে ডলার বিক্রি করেছিল ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার।
ডলার সংকট কাটাতে চলতি বছরের ১৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে কারেন্সি সোয়াপ কার্যক্রম চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আওতায় প্রায় ১৭৫ কোটি ডলার রেখে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি তারল্য সহায়তা নিয়েছে সংকটে থাকা কয়েকটি ব্যাংক। জমা রাখা ডলার বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভে যোগ হচ্ছে। এর মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়াতে চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে চলতি মাসে আকুসহ অন্যান্য আমদানি বিল পরিশোধের চাপে রিজার্ভ ধারাবাহিক কমছে।
উৎসঃ মানবজমিন
