Banglar Chokh | বাংলার চোখ

আজ থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

শিক্ষা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০০:৪৪, ১ জুলাই ২০২৪

সর্বশেষ

আজ থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

ছবি:সংগৃহীত

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা-প্রত্যয় স্কিমকে বৈষম্যমূলক ও মর্যাদাহানিকর উল্লেখ করে আজ থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই স্কিমে যুক্ত করার পর থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন তারা। ১৩ই মার্চ প্রত্যয় স্কিম সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিবৃতি প্রদান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, কর্মবিরতি পালন করে আসছিলেন শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা। গতকালও পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হয়। এরপরও দাবি আদায় না হওয়ায় আজ থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন তারা।

ঈদের ছুটির পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় খুলছে আজ। আবার আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসও। এমতবস্থায় সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। যাতে করে অচলাবস্থা সৃষ্টি হতে পারে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। শিক্ষক-কর্মচারীরা শুরুতে ৩টি দাবি জানিয়েছিলেন। গত ১৩ই মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা প্রত্যয় স্কিমের পেনশন বিষয়ক বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন।
 
দাবিগুলো আদায় না হওয়ায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন আন্দোলন চলমান রেখেছে। গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটেও ‘প্রত্যয় স্কিম’কে প্রত্যাখান করা হয়। 
এদিকে শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা তৈরি হলে আন্দোলন পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তীতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যেহেতু সর্বজনীন পেনশনের সিদ্ধান্তটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নয়, সেহেতু এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন কিংবা এর পক্ষে-বিপক্ষে আপাতত কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, সর্বজনীন পেনশনে যেতে কেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা অনীহা প্রকাশ করেছেন সেটা নিয়ে নেতারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে তুলনামূলক একটি চিত্র দেখিয়েছেন। সেখানে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের পর্যবেক্ষণ তাদের জানিয়েছি। সেগুলো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিল না হওয়ায় সারা দেশে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। এই স্কিম বাতিলের পাশাপাশি  বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালুর দাবিতে আজ থেকে সকল প্রকার একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনভুক্ত দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এর ফলে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। 

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের মূল ফটকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছেন ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, পেনশন সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক’ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে। সোমবার থেকে আমরা সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাবো।

সরকার শিগগিরই এই দাবি মেনে নেবে বলে আশা করেন। এদিকে সোমবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি থেকে ঘোষণা দেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের বিষয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় আজ থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মমিন উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

অসন্তোষের মধ্যে আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে প্রত্যয় স্কিম
অসন্তোষ ও বিরোধিতার মধ্যে আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন পেনশন ব্যবস্থা প্রত্যয়। দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতাভুক্ত করার লক্ষ্যে এবং ভবিষ্যতে কর্মক্ষম জনসংখ্যা হ্রাসের কারণে নির্ভরশীলতার হার বৃদ্ধি পাবে বিবেচনায় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা চালু করে সরকার। এর আওতায় ইতিমধ্যে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা নামে চারটি পেনশন স্কিম চালু হয়। নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে প্রত্যয়। যেটি স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ-প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে। এ ছাড়া সেবক নামে আরেকটি স্কিম চালুর কথা রয়েছে আগামী বছরের জুলাই থেকে। যেখানে সরকারের রাজস্ব খাতভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। তবে প্রত্যয় স্কিম নিয়ে চলছে বিতর্ক। অসন্তোষ রয়েছে এ স্কিমের আওতায় আসা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। এ স্কিমের বিরোধিতা করে আন্দোলনে রয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। গত মার্চে প্রত্যয় স্কিমের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। আজ থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। তাই অচলায়তনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। যদিও সরকারের অর্থবিভাগ বলছে, প্রত্যয় স্কিম সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুরক্ষা আরও বাড়বে। এ ব্যবস্থা শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ। আয়করমুক্ত থাকবে পেনশনের অর্থ। অবসরে যাওয়ার পর থেকে প্রতি মাসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের ব্যাংক হিসাবে পেনশনের অর্থ জমা হবে। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, প্রত্যয় স্কিম বৈষম্যমূলক এবং এর মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একইসঙ্গে এটি শিক্ষকদের জন্য অবমাননাকরও। তারা মনে করেন এ ব্যবস্থা চালু হলে মেধাবীরা আর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা পেশায় আসবেন না। তাই এটি প্রত্যাহার করতে হবে। এদিকে শিক্ষক কর্মকর্তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা বিবেচনায় আন্দোলন করছেন বললেও বাস্তবে এ ব্যবস্থায় নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি রয়েছে। কারণ পদোন্নতি ছাড়াও অনেক সময় শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। তখন প্রত্যয় স্কিমে পড়ে যাবেন নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা। তাই তারা এর বিরোধিতা করছেন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়