Banglar Chokh | বাংলার চোখ

সরকারের মদদপুষ্টদের আখের গোছানোর বাজেট:জামায়াত  

রাজনীতি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৭:৪৯, ১০ জুন ২০২৪

সর্বশেষ

সরকারের মদদপুষ্টদের আখের গোছানোর বাজেট:জামায়াত  

ছবি:সংগৃহীত

সরকার ও সরকারের মদদপুষ্টদের আখের গোছানোর জন্যই ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেট পেশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটি বলছে, এই বাজেট জনগণের কল্যাণের জন্য উপস্থাপন করা হয়নি। অর্থমন্ত্রী গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’ শীর্ষক বাজেট বক্তব্যে তথ্য-উপাত্ত পেশ করে যে সব আশার বাণী শুনিয়েছেন, তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তিনি সুখী-সমৃদ্ধ বলতে যে বাংলাদেশের কথা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। ব্যাংক লুটপাটসহ শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, বিদেশে অর্থপাচার ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় লাগামহীন দুর্নীতির কারণে চরম কষ্টকর জীবন-যাপন করছেন। এটাকে সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বলা যায় না। সোমবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটের জামায়াতের প্রতিক্রিয়া জানাতে ভার্চ্যুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন।

গোলাম পরওয়ার বলেন, বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নৈতিক ও অর্থনৈতিক কোনো দিক থেকেই গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থমন্ত্রীর এই পদক্ষেপ সামাজিক ন্যায্যতার দিক থেকে বৈষম্যমূলক। বাজেটে সর্বোচ্চ কর হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ শতাংশ।
 
কিন্তু ১৫ শতাংশ কর দিয়েই কালো টাকা বৈধ করা যাবে, এ পদক্ষেপের মাধ্যমে কর ফাঁকিবাজদের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে নিয়মিত ও সৎ করদাতাদের তিরষ্কৃত করা হয়েছে। আর সরকারের এই পদক্ষেপ দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করবে। 
বাজেটে করের চাপ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়েছে: বাজেটে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, প্রতিদিনের জীবন-যাপনে অপরিহার্য নানা পণ্যের সেবার ওপর বাড়তি কর চাপানো হয়েছে। মুঠোফোনে কথা বলার ওপর অতিরিক্ত কর বসানো হয়েছে। পানি শোধন যন্ত্র, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বা এসি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন গৃহস্থালি দ্রব্যের ওপর শুল্ক কর বাড়ানো হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগ বাড়াবে। 

রাজস্ব আয় প্রসঙ্গে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বড় অংকের ব্যয় মেটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৪ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয়া হয়েছে। এটি অর্জন করতে চলতি সংশোধিত বাজেট থেকে ৬৬ হাজার কোটি টাকা বেশি আহরণ করতে হবে। যা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। প্রকৃতপক্ষে সরকারের রাজস্ব নীতি ব্যক্তি ও গোষ্ঠী নির্ভর হয়ে পড়েছে। 

ঋণ নির্ভর ও সংকোচনমূলক বাজেট বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করবে: বাজেটে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বিশাল ঋণ নির্ভর বাজেট বাস্তবায়ন করা সরকারের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা বাস্তবায়িত হলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে এবং মুদ্রা বাজারে অনেক বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। সুদের হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে। দেখা দিতে পারে আরও তারল্য সংকট। আর বাজেটে মূল্যস্ফীতি, কর-জিডিপির অনুপাত এবং জিডিপির অনুপাতে বাজেট ঘাটতির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, সেটি অর্জন করা কঠিন হবে। 

খেলাপি ঋণ: বাজেটে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণের কোনো কৌশল রাখা হয়নি বলে অভিযোগ করেন গোলাম পরওয়ার। বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ঋণ খেলাপি ও হুন্ডির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার কোনো কথা বলা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক যে হিসাব করেছে তাতে বিগত মার্চ মাস পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৮২ হাজার ৯ শত ২৫ কোটি টাকা, যা প্রকৃত চিত্র নয়। বাস্তবে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। খেলাপি ঋণ কমাতে হলে খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাজেটে তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এতে খেলাপি ঋণের প্রবণতা আরও বাড়বে। 

শিক্ষাখাত প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটেও শিক্ষাখাতে বরাদ্দ নিয়ে ব্যাপক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থ বছর থেকে ধারাবাহিকভাবেই জিডিপিতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমছে। যদিও শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ বেশি দেখিয়ে অনেকটা শুভঙ্করের ফাঁকির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। সরকার দেখাতে চাচ্ছে- চলতি অর্থ বছরের তুলনায় আগামী অর্থ বছরে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এ বরাদ্দ মূল বাজেটের ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। 
কৃষিখাত: কৃষির উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও কৃষকদের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখযোগ্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি বলে অভিযোগ করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল। তিনি বলেন, শ্রমজীবীদের ৪৩ দশমিক ৮৯ শতাংশই কৃষি কাজের সাথে জড়িত। কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির কোনো নিশ্চয়তা নেই বাজেটে। সার, বীজ ও কীটনাশক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কৃষকদের সুবিধা দেয়ার কোনো দিকনির্দেশনা বাজেটে নেই। 
বাজেট দেশকে ঋণ মুক্ত করার কোনো ব্যবস্থা নেই এবং জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না বলে মন্তব্য করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি, আয় সীমা, চিকিৎসা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা, ব্যাংক ব্যবস্থাপনা, বেকারত্ব, শিল্পখাতের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরেন তিনি।
জামায়াতের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমীর মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়