![প্রভাবশালীর অত্যাচার নির্যাতনে বাড়ি ছাড়া ১২টি পরিবার প্রভাবশালীর অত্যাচার নির্যাতনে বাড়ি ছাড়া ১২টি পরিবার](https://www.banglarchokh.com.bd/media/imgAll/2023July/21221-2403011938.jpg)
ছবি: বাংলার চোখ
মামলা নিষ্পত্তি করতে রাজি না হওয়ায় অভিযুক্ত আসামি পক্ষের লোকজন বাদী পক্ষের লোকজনের বাড়ি ঘর ভাংচুর, লুটপাট ও কৃষি জমি চাষাবাদে বাধা নিষেধ দেয়ায় পতিত রয়েছে শতবিঘা কৃষি জমি। অভিযোগ রয়েছে, আসামি পক্ষের অত্যাচার ও প্রাণনাশের হুমকির ফলে ৬মাস ধরে বাড়ি ছেড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে বাদীপক্ষের ১২টি পরিবার।
এঘটনা ঘটেছে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার বধুনগর গ্রামে।
নিবিঘ্নে বাড়ি ঘরে ফেরা ও কৃষি জমি চাষাবাদ করতে পরিত্রাণ চেয়ে মামলার বাদী মো: রজব আলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অভিযোগ করার পরও কোন সুরাহা মিলেনি।
ওই অভিযোগে জানাযায়, বধুনগর গ্রামের একই বংশের জাহের মেম্বার, জাহাঙ্গীর ও আলামিনের লোকজনের সাথে ২০২০ সাল থেকে বিভিন্ন বিষয়ে কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। মামলা গুলো তুলে নিতে প্রতিপক্ষ লোকজন বিভিন্ন সময় বাদী রজব আলীর লোকজনের উপর আক্রমণসহ ঘর বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করে আসছে। প্রাণ বাঁচাতে বাদী পক্ষের ১০/১২টি পরিবার নিজ বসত বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই সুযোগে বাড়ির টিউবওয়েল, বিদ্যুতিক ক্যাবল, মিটারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর ও লুটপাট করে নিয়ে যায় আসামি পক্ষের লোকজন। তাছাড়া বাড়ির সামনে ও হাওরের জমিতে চাষাবাদে বাধা নিষেধ দেয়ায় ভয়ে তারা কৃষি জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেনা। ফলে শতবিঘা কৃষি জমিতে এ মৌসুমে সরিষা ও ইরি ধান রোপন করতে পারেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ছিলো দেশের কোথাও এক শতাংশ কৃষি জমি যেন খালি না থাকে। চাষাবাদে প্রধানমন্ত্রী উৎসাহকে উপেক্ষা করে বিবাদী পক্ষের লোকজন বাদী পক্ষকে চাষাবাদে বাধা নিষেধ দিচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
সরেজমিনে উপজেলার বধুনগর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ১২ থেকে ১৫টি ঘর জরাজীর্ণ অবস্থায় ঘরের দরজা জানালা, বেড়া, আসবাবপত্র ভাংচুর অবস্থায় রয়েছে। বিদ্যুতিক মিটার, ক্যাবল ও টিউবওয়েল গুলো খুলে নেয়ার আলামত পাওয়া গেছে। তাছাড়া বাড়ির সামনে ও হাওরে থাকা আনুমানিক শতবিঘা কৃষি জমি খালি পড়ে থাকতে দেখাগেছে।
ভুক্তভোগী মো: বাবুল মিয়া জানান, বিবাদী পক্ষের জাহের মেম্বার, আল আমিন মিয়া, জাহাঙ্গীর গংদের হামলা নির্যাতনের শিকার হওয়ায় একাধিক ঘটনায় তারা কয়েকটি মামলা করেন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এসব মামলা গুলো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ওই মামলা গুলোর মধ্যে দুইটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে চার্জশিট দাখিল করার পর বিবাদী পক্ষের লোকজনের অত্যাচার নির্যাতন বেড়ে যায়। তাদের ভয়ে ১২টি পরিবার ৬মাস ধরে বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। জাহের মেম্বার ও আল আমিন গংরা তাদের ১৫টি ঘর ভাংচুর লুটপাট ও বাড়ি ছাড়া করেই রেহাই দেয়নি। বরং তাদের জমি যারা চাষাবাদ করতো তাদেরকেও বাধা নিষেধ দিয়ে চাষাবাদ বন্ধ করে দেয়। তিনি জানান তাদের বাড়ির শতবিঘা কৃষি জমিতে আবাদ করতে না পারায় জমিগুলো এখন পতিত পড়ে আছে। প্রশাসন এ ঘটনার তদন্ত করে দোর্ষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও তাদের পরিবার গুলো যেন বাড়ি ফিরতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
ভুক্তভোগী জয়নাল আবেদিন জানান, আলামিন ও জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে ঘর বাড়ি ভাংচুর লুটপাট ও কৃষি জমি চাষাবাদে বাধা দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। তাকেও দুই বার আক্রমণ করে মারার জন্য। মামলা তুলার জন্য হুমকি দেয়। আলামিনের একটি গ্রুপ এলাকার সবচেয়ে খারাপ গ্রুপ। তারা চুরি ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত আছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস নেই।
ভুক্তভোগী আনোয়ারা বেগম জানান, রাতের বেলা ঘুমের সময় আলামিন ও সাগরসহ কয়েকজন ঘরে প্রবেশ করে গলায় ও মুখে চিপ দিয়ে ধরে স্বর্ণালংকার জোড় করে খুলে নিয়ে যায়। এঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা করায় আসামিদের অত্যাচার নির্যাতন বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
ভুক্তবভোগী মাজেদা বেগম জানান, আমার বাড়ি ছাড়া ৬ মাস যাবত। ডাকাতির একটা মামলা ছিলো অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। মামলা কেন তুলে নেয়না তার জন্য অত্যাচার নির্যাতন করে বাড়ি ছাড়া করেন। এবং শতবিঘা কৃষি জমিতে চাষে বাধা নিষেধ দেয়ায় জমিগুলো খালি পড়ে আছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী মো: রজব আলী জানান, যারা কৃষি জমি চাষ করতো তাদেরকে বধুনগর গ্রামের জাহের মেম্বার, জাহাঙ্গীর ও আলামিনের নেতৃত্বে বাধা নিষেধ দেয়ায় শতবিঘা জমি পতিত রয়েছে। আলামিন ও জাহাঙ্গীর গংরা ডাকতি করে স্বর্ণালংকার নিয়ে গেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার পর মামলা তুলে না নিতে আসামী পক্ষের অত্যাচার নির্যাতনে প্রায় ৬মাস ধরে ১২টি পরিবার বাড়ি ছাড়া। তিনি এঘটনার সঠিক বিচার দাবি করেন।
অভিযুক্ত জাহের মেম্বার বলেন, কৃষি জমিতে বাধা দেয়নি। ১৫দিনের সময় দিয়েছিলাম আপোষ মীমাংসার জন্য। তারা দরবারে মীমাংসা করতে রাজি হয়না।