Banglar Chokh | বাংলার চোখ

সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল চুরির ঘটনায় উদ্বিগ্ন জেলা খাদ্য বিভাগ 

সারাবাংলা

মোঃ ফজলুল হক (বগুড়া জেলা প্রতিনিধি)

প্রকাশিত: ০১:০৫, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সর্বশেষ

সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল চুরির ঘটনায় উদ্বিগ্ন জেলা খাদ্য বিভাগ 

.

চলতি বছরে বগুড়া জেলায় একের পর এক সরকারি খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির চাল চুরির ঘটনায় উদ্বিগ্ন জেলা খাদ্য বিভাগ। এসব চুরির ঘটনায় জড়িতরা ধরা পড়লেও অধরা রয়েছে নেপথ্যের দূর্বৃত্তরা। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় খাদ্য কর্মকর্তার জিম্মায় থাকা সিলগালা করা গুদাম থেকে ১ হাজার ১২৪ বস্তা সরকারি চাল চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে সারিয়াকান্দি পৌর এলাকার বাগবেড় গ্রামের বেলাল হোসেন (৩৫), আন্দরবাড়ী গ্রামের রুসাত ফকির (২৮) ও রায়হান কবির (২৭) ।

একই ভাবে ২১ আগস্ট ভোরে বগুড়া সদর উপজেলায় ১৫৫ বস্তা সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চুরিকৃত চাল উদ্ধার করে সদর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় আওয়ামীলীগ নেতাসহ দুই জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এই চাল চুরির ঘটনায় আটককৃতরা হলেন সদর উপজেলা শেখেরকোলা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণভাগ গ্রামের মোঃ মোখলেছার রহমান দিপু (৫৫) এবং দোবাড়ীয়া গ্রামের মোঃ ফেরদৌস আলম (৩৮)। বগুড়া সদর থানার তদন্ত পরিদর্শক মোঃ শাহিনুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে ১৫৫ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। এ সময় আলম প্রামানিক নামে আরও এক ব্যবসায়ী পুলিশের উপস্থিত টের পেয়ে পালিয়ে যান। উদ্ধারকৃত ১৫৫ বস্তার প্রতিটি গায়ে লেখা ছিল শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ। বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. শরাফত ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি চাল অবৈধভাবে কালোবাজারে কেনাবেচা করে আসছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করি। 
অপরদিকে গত ২৪ আগস্ট বগুড়ার গাবতলী হতে গভীর রাতে  খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৩০০ বস্তা চাল ট্রাকে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ও ৩০০ বস্তা চাল উদ্ধার করে। এই ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন, বগুড়া জেলার শাজাহানপুর উপজেলার হেলেঞ্চা পাড়ার ট্রাক চালক রোহান হাসান (২২), একই উপজেলার চান্দাই গ্রামের ট্রাকের হেলপার নিরব ইসলাম (২১) ও গাবতলী উপজেলার বালিয়াদিঘি ইউনিয়নের ইউনুস আকন্দ (৫৫)। উদ্ধা হওয়া চালের বস্তাগুলোর মধ্যে ৩০ কেজি ওজনের ২৭৬ বস্তা ও ৫০ কেজি ওজনের ২৪ বস্তা। মোট চাল রয়েছে ৯ হাজার ৪৮০ কেজি। এ বিষয়ে  গাবতলি থানার বাগবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ কামরুজ্জামান বলেন, গাবতলী উপজেলার বালিয়াদিঘিতে গ্রেপ্তার ইউনুস আকন্দের বাড়ি থেকে ট্রাকে করে ৩০০ বস্তা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। গোপন সংবাদরে ভিত্তিতে বাগবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সদস্যরা ভোর ৪টার দিকে ট্রাক সহ তাদেরকে আটক করে। 

অপরদিকে গত ২৯ আগস্ট র‌্যাব-১২ সদস্যরা গাবতলী উপজেলার নাড়–য়ামালা এলাকা থেকে বগুড়ায় সরকারি চাল চোর সিন্ডিকেটের সদস্য পীরগাছা নতুন হাট এলাকার জনৈক মোফাজ্জল হোসেনর পুত্র ইলিয়াছ হোসেন (৩৩) নামে এক জনকে  আটক করে পরবর্তীতে গাবতলি থানা পুলিশের হস্তান্তর করে। একইভাবে গত ১লা আগস্ট র‌্যাব-১২ সদস্যরা দুপচাঁচিয়া উপজেলার ইসলামপুর রঘুসারদিঘী মুহিত অটো রাইসমিল থেকে ৭৪ বস্তা সরকারি চাল উদ্ধার করে।  এ ঘটনায় লাকি ট্রেড এন্ড কমার্সের মালিক মাহফুজ হাসান বাদী হয়ে ট্রাক মালিক সুলতান মাহমুদ, ট্রাক ড্রাইভার মো. কুদ্দুস, ট্রাক হেলপার মো. ইলিয়াছ হোসেন ও ঠিকাদার মো. কালাম মোবারক হোসেনর নাামে মামলা দয়ের করে। সেই মামলার প্রেক্ষিতে পলাতক আসামি ইলিয়াছকে আটক করা হয়। এবিষয়ে র‌্যাব-১২ কোম্পানী কমান্ডার মীর মনির হোসেন বলেন, আটক ইলিয়াছ আমাদের কাছে প্রাথমিক ভাবে স্বীকার করেছে তিনি দীর্ঘদিন ধরে চুরির সাথে জড়িত। 

এদিকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, মূলত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের আওতাধীন কতিপয় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের খামখেয়ালীপনা, নিয়মিত অফিস না করা এবং জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে সময়মতো অফিসিয়াল তথ্য না জানানোর কারণে একদিকে যেমন সেবা গ্রহিতারা হয়রানীর শিকার হচ্ছে অপরদিকে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির সরকারি চাল বিতরণ নিয়েও নয়-ছয় হচ্ছে। আর খাদ্য বিভাগ কর্মকর্তাদের এহেন খাম-খেয়ালীপনার সুযোগ নিয়ে খাদ্য বিভাগের একটি চিহ্নিত সিন্ডিকেট চাল চুরির ঘটনা সংঘঠিত করার সুযোগ পাচ্ছে। জনস্বার্থে অনতিবিলম্বে এইসব খাদ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে জেলা খাদ্য বিভাগ ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে বলে তারা মত প্রকাশ করেন। 

এ বিষয়ে বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, ব্যক্তির দায় খাদ্য বিভাগ নিবে না। তাই যদি কোন খাদ্য কর্মকর্তার অনিয়মের বিষয়ে সুস্পষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 
 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়