Banglar Chokh | বাংলার চোখ

হাটহাজারীতে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গোলাগুলি,গুলিবিদ্ধসহ আহত ১৫

নির্বাচন

আজিজুল ইসলাম হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:৫৬, ২১ মে ২০২৪

সর্বশেষ

হাটহাজারীতে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গোলাগুলি,গুলিবিদ্ধসহ আহত ১৫

ছবি: বাংলার চোখ

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে দ্বিতীয় দফায় ষষ্ঠ উপজেলার পরিষদ নির্বাচনে ফতেপুর জোবরা গ্রামে কেন্দ্র দখল নিতে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গোলাগুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, ক্যাম্প ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, আরও বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে ভোট কেন্দ্রের বাইরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং কেন্দ্রে আগত নারী ও পুরুষ ভোটারদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া, কয়েকটি কেন্দ্রে জাল ভোট প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। তবে, ভোটকেন্দ্রেগুলোতে ভোটারদের আমেজ ছিল নিরুত্তাপ এবং অনুপস্থিতি ছিল বেশ লক্ষনীয়।

সরেজমিন ঘুরে এবং প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে ১০৬টি কেন্দ্রের ৯শ ৭৩টি বুথে সকাল ৮টা বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতীহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে। তবে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের জোবরা গ্রামে পাশাপাশি দুইটি কেন্দ্র জোবরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জোবরা পিপি স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীকের এস এম রাশেদুল আলম ও ঘোড়া প্রতীকের সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমানের সমর্থকদের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষের সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

উক্ত ঘটনার আধাঘন্টা যেতে না যেতে দুপুর ১টা দিকে মোটরসাইকেল প্রতীকের এস এম রাশেদুল আলমের সমর্থকরা চড়াও হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দুই নম্বর সড়কে রেলগেটে মোটরসাইকেল প্রার্থীর সমর্থকরা জড়ো হয়ে আতঙ্ক ছড়াতে দুই দফায় ৮-১০ রাউণ্ড গুলিবর্ষণ করে। এ সময় ভোট কেন্দ্রে আগত দুই ভোটার গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধরা হলেন-স্থানীয় প্রবাসী মোহাম্মদ করিম (৩০) ও মোহাম্মদ আরিফ (২৪)।

এ সময় ঘোড়া প্রতীকের সমর্থকদের ভোটার স্লিপ প্রদানকারী ক্যাম্প ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। পরে ওই ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ করে এবং বেশ কিছু নারী ও পুরুষ ভোটার এর উপর চড়াও হয়ে তাদেরকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ করে স্থানীয় এলাকাবাসী মো. বাসেক। তিনি জানান, মোটরসাইকেল সমর্থকদের হামলায় প্রায় ১২-১৩জন আহত হয়েছে। আওতারা হলেন-ফরিদ আহমেদ (৬০), মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন (৪৫), মো. হাসেম (৪০), মো. মামুন (৩৬), আসিফ আকবর (৩৬) ও শিরু আক্তার (২৪)। উক্ত ঘটনায় গুলিবিদ্ধ দুইজন ও আহতদের বেশ কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে জোবরা এলাকায় র‍্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত হয়ে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে জানান হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকরা ঘোড়া প্রতীকের উপর চড়াও হয়ে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এখন উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য কেন্দ্রের বাইরে এবং ভেতরে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কিন্তু কেন্দ্র বাইরে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গোলাগুলির বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এর কারণ জানাতে পারেনি উক্ত কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সহকারী কৃষি প্রকৌশলী মো. ফরিদ উজ জামান। তিনি জানান, কেন্দ্রের ভিতরে কোন বিশৃঙ্খলা হয়নি। বাইরে যখন বিশৃঙ্খলা হচ্ছিল তখন কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অব্যাহত ছিল। তবে, ঘটনার পর উক্ত দুই কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে কমে যায় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

তাছাড়া, মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই মহিলা ভাইস- চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতারা হলেন-ইমতিয়াজুল আলম (৩৩) ও জসিম শিকদার (৫০)। দক্ষিণ মাদার্শা ইউনিয়নের মধ্য মাদার্শা নবাবীয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে, উপজেলার ধলই ইউনিয়নের পশ্চিম ধলই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ঘোড়া প্রতীকের এজেন্ট মো. হারুনের স্ত্রী শানু বেগম (৪০) নামে এক ভোটারের ভোট অন্যজন প্রয়োগ করেছে অভিযোগ করেছে। বিষয়টি স্বীকার করে উক্ত কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ফতেয়াবাদ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ওই ভোটার (শানু বেগম) চাইলে টেন্ডার ভোট দিতে পারবে। 

এছাড়া, নির্বাচন চলাকালে উপজেলার গুমানমর্দ্দনের বেশ কিছু কেন্দ্রে ও দক্ষিণ মাদার্শা আকবরিয়া স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে জাল ভোট প্রদানের অভিযোগ করেছে বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকরা। পাশাপাশি জাল ভোট প্রদানের চেষ্টার অভিযোগে উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মো. রায়হান (২২) নামে এক ভুয়া ভোটারকে আটক করেছে পুলিশ।

এদিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভোট গণনা চলছিল বলে জানা গেছে। তবে, দুই একটি কেন্দ্রে নিরবিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়