ফাইল ছবি
সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেষ ঘণ্টায় ভোটের অস্বাভাবিক হার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই)। গত সোমবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে তারা প্রতি ঘণ্টায় ভোট পড়ার তথ্য জানতে চেয়েছে। এদিকে শেষ ঘণ্টার ভোটের হার নিয়ে প্রশ্ন তুলছে স্থানীয় কিছু পর্যবেক্ষক সংস্থাও। তারা বলছে, ভোটের শেষ সময়ের দিকে বিভিন্ন কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। এজেন্টদের হুমকি দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। পর্যবেক্ষকরা বিভিন্ন স্থান পর্যবেক্ষণ করে সংস্থার কাছে এমন তথ্য দিয়েছে।
৭ই জানুয়ারি ভোটগ্রহণ চলার সময় গণমাধ্যমের কাছে ৩ দফা ভোট পড়ার হার জানায় নির্বাচন কমিশন। সেদিন প্রথম দুই দফা ইসি সচিব এবং ভোট শেষে সিইসি গণমাধ্যমে ব্রিফ করেন। সেই হিসাব অনুযায়ী, দুপুর ১২টা ১০ মিনিট পর্যন্ত গড়ে ১৮.৫ শতাংশ, এরপর বেলা ৩টার পর জানানো হয় ২৭ শতাংশ এবং বিকাল ৪টায় ভোট শেষ হওয়ার ঘণ্টা দেড়েক পর সংবাদ সম্মেলনে সিইসি প্রথমে ২৮ শতাংশ পরে ৪০ শতাংশের মতো ভোট পড়ার তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে সিইসি ২৮ শতাংশ বলার পর পাশে থাকা কর্মকর্তারা তাকে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানালে তিনি সংশোধন করে বলেন, সংখ্যাটা ৪০-ও হতে পারে, এর কমবেশিও হতে পারে। এরপর থেকেই ভোটের হার নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়।
বিভিন্ন প্রার্থীরাও শেষ ঘণ্টায় ভোট কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। ভোট পড়ার হারসহ ফলাফল নিয়ে সন্দেহ থাকলে চ্যালেঞ্জ করার আহ্বান জানিয়েছেন সিইসি। পরে অবশ্য চূড়ান্ত হিসেবে নির্বাচনে ৪১ দশমিক ৯৯ শতাংশ ভোট পড়ার তথ্য দিয়েছে ইসি। যদিও সংবাদ সম্মেলনে সিইসি এই হার উল্লেখ করেছিলেন ৪১.৮।
এদিকে ইইউ, আইআরআই ও এনডিআইয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ইসি’র সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বৈঠকে ইইউ ও মার্কিন দুই সংস্থা নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ও ইসি’র ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি’ অ্যাপসের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছেন। ভোটের শেষ মুহূর্তে হঠাৎ হার বেড়ে যাওয়া নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন। এ জন্য তারা প্রতি ঘণ্টায় ভোট পড়ার তথ্য জানতে চেয়েছেন। প্রতি ঘণ্টায় ক’জন ডেটা ইনপুট দিয়েছে, কতোজন দিতে পারেনি-এই তথ্যও চেয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে অ্যাপসের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। কিন্তু তারা কপি চেয়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের ভোটের হার নিয়ে খবর দেখে তারা মনে করছেন, ভোটে অনিয়ম হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, ইসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ভোটের দিন অনেকেই নির্ধারিত সময়ে ডেটা এন্ট্রি দিতে পারেনি। তিনটি জেলায় মোটেই দিতে পারেনি। পরে তারা প্রতি ঘণ্টায় অ্যাপসে কতোজন এন্ট্রি দিয়েছে পুরো স্টেটমেন্ট চেয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেয়া হবে। কারণ কমিশন মনে করে সবকিছু স্বচ্ছভাবেই করা হয়েছে।
বৈঠকের বিষয়ে ইসি’র অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের টেকনিক্যাল টিম এবং এনডিআই ও আইআরআইয়ের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তারা মূলত নির্বাচনসংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে চেয়েছিল। বিভিন্ন পরিসংখ্যান নিতে এসেছিল। আমরা তাদেরকে সকল তথ্য দিয়েছি।
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত ঢাকার বাইরের একটি পর্যবেক্ষক সংস্থার সেক্রেটারি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শেষ এক ঘণ্টায় অনেক কেন্দ্রে ভোট বেশি পড়ার তথ্য পেয়েছি। যদিও ওইসব কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনে আমাদের প্রতিবেদন জমা দিয়ে দিয়েছি। নির্বাচন কমিশনের ফরমেট অনুযায়ী তথ্য জানিয়েছি। ওই ফরমেটে এমন তথ্য দেয়ার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।
ওদিকে ভোটের শেষ ঘণ্টার হার নিয়ে পরাজিত প্রার্থীরাও অভিযোগ করেছে। গাইবান্ধা-১ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, ভোটে কারচুপি হয়েছে। শতকরা ৯০ ভাগ কেন্দ্রে আমি ২-৩ জনের বেশি ভোটার দেখিনি। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নগণ্য ভোটার উপস্থিতি ছিল। কিন্তু দিন শেষে কাস্টিং যা দেখলাম, আমার মনে হয়েছে, এখানে ভোট কারচুপি হয়েছে। ময়মনসিংহ-১০ আসনে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী কায়সার আহাম্মদ বলেছেন, ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল ভোটারশূন্য। নৌকার লোকজন কেন্দ্র দখল করে অনবরত সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরেছে। আমরা এই ভোট বাতিল করে পুনরায় সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানাই। ফরিদপুর-১ আসনে জালভোটসহ অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট পুনরায় গণনা ও অর্ধশতাধিক ভোটকেন্দ্রে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান দোলন। অনিয়মের ভিডিও ও স্থিরচিত্রসহ আসনটির অর্ধশতাধিক কেন্দ্রে নানা অনিয়মের তথ্য-প্রমাণাদি তুলে ধরে সিইসি’র কাছে তিনি লিখিত অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।