আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২:৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবি :সংগৃহীত
ভারতের ওড়িশা রাজ্যে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে এক মুসলিম যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পিটুনির শিকার হয়ে আরও দুইজন এখন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এই ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খবর বিবিসির।
প্রতিবেদন মতে, বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ওড়িশার সম্বলপুর জেলায় এই ঘটনা ঘটে। সম্বলপুরের মহকুমা পুলিশ অফিসার (এসডিপিও) জানিয়েছেন, আইন্থাপল্লী থানার অন্তর্গত দানিপালি এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে।
নিহত ওই যুবক ১৯ বছর বয়সি জুয়েল রানা পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের সুতি অঞ্চলের বাসিন্দা। মাত্র পাঁচদিন আগে তিনি বাড়ি থেকে কাজ করতে ওড়িশা গিয়েছিলেন। মারধরের শিকার তার দুই সহকর্মী বলেছেন, দুষ্কৃতকারীরা তাদের মারধর করে। তারা প্রথমে ‘বাংলাদেশি’ বলে সন্দেহ করে এবং পরিচয়পত্র দেখতে চায়।
পরিযায়ী শ্রমিকদের একটি সংগঠন বলছে, কেন্দ্রীয় সরকার ‘বাংলাদেশি’ এবং ‘রোহিঙ্গা’ ধরার যে বিশেষ প্রক্রিয়া শুরু করেছে, তারই ফলশ্রুতিতে বাংলাভাষী মুসলমানরা এভাবে একের পর এক বাংলাদেশি সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হচ্ছেন।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে পরিযায়ী নির্মাণ শ্রমিক পল্টু শেখ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জুয়েল আর বাকি দুজন ঘরে রান্নাবান্না করে খেয়ে বাইরে বেরিয়েছিল বিড়ি খেতে। আমাদের ঘরের একেবারেই পাশে ওরা থাকত। একদল স্থানীয় প্রথমে এসে ওদের কাছ থেকে বিড়ি চায়।’
পল্টু শেখ আরও বলেন, ‘তখন রাত সাড়ে আটটা হবে। ওই দলটা বিড়ি চাওয়ার পরেই সন্দেহ করে যে জুয়েলরা তিনজন বাংলাদেশি কি না, আধার কার্ড দেখতে চায়। একজন আধার কার্ড আনতে ঘরে গেছে, এরমধ্যেই মারধর শুরু করে দেয় ওই স্থানীয় লোকেরা।’
তিনি জানান, এর আগেও বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করে তাদের হুমকি দিয়েছে স্থানীয় লোকেরা। কিন্তু এতদিন কেউ মারধর করেনি, যে ঘটনা ঘটল বুধবার রাতে। তার কথায়, ‘ওদের হাত থেকে একজন পালিয়ে এসে আমাদের ঘরে খবর দেয় যে আমায় বাঁচাও, মেরে ফেলছে। আমরা সবাই তখন বেরিয়ে আসি।’
আরেকজন নির্মাণ শ্রমিক সাদ্দাম হুসেন বলেন, ‘চিৎকার শুনে আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখি ওই লোকগুলো অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে পালিয়ে গেল। এরপর আমরা সবাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। জুয়েল মারা গেছে। গ্রামে খবর দেয়া হয়েছে।’
মুর্শিদাবাদ জেলার সুতি এক নম্বর ব্লকের অধীন চক বাহাদুরপুর গ্রামে জুয়েল রানার বাড়ি। তার এক চাচা রিয়াকুল শেখ গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি প্রত্যক্ষদর্শী অন্যান্য শ্রমিকদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন, ‘ওরা তিনজন খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিড়ি খাওয়ার সময়েই এই ঘটনা। চার-পাঁচ জন গুন্ডা এসেছিল। তারা জুয়েলদের তিনজনকে বলে যে তোমরা বাংলাদেশি, ভারতে কেন থাকবে। জয় শ্রীরাম স্লোগান দিতে বলেছিল। মারধর করার সময়ে মোবাইল কেড়ে নেয়।’
মহকুমা পুলিশ অফিসার তোফান বাগ সুব্রত পতিকে ঘটনাক্রমের যে বর্ণনা দিয়েছেন, তার সঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শী জুয়েল রানার সহকর্মীদের বয়ান প্রায় মিলে গেছে। তোফান বাগ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘তিনজন শ্রমিক বিড়ি খাচ্ছিলেন। সেই সময়ে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা সেখানে গিয়ে আধার কার্ড দেখতে চায়। তারপরেই তিনজনকে মারধর করে। একজন ঘটনাস্থলেই মারা যান।’
তোফান বাগ জানান, তার দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে এবং পরিবারকে খবর দেয়া হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে এবং তদন্ত এখনও চলছে।
চলতি ডিসেম্বর মাসেই ভারতের তিনটি রাজ্যে গণপিটুনিতে মৃত্যুর তিনটি ঘটনা সামনে এসেছে। এর মধ্যে বিহারে একজন মুসলিম ফেরিওয়ালা তার ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে গণপিটুনির শিকার হয়ে হাসপাতালে মারা যান। তিনি পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ছত্তিশগড় থেকে কেরালায় কাজের খোঁজে গিয়েছিলেন।
কেরালায় একজন দলিত শ্রেণির হিন্দুকে বাংলাদেশি সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয়। তৃতীয় ঘটনাটি বুধবার রাতে ওড়িশা রাজ্যে ঘটল। জুয়েল রানাও পরিযায়ী শ্রমিক ছিলেন। মুর্শিদাবাদ থেকে কাজে গিয়েছিলেন ওড়িশায়।
ওড়িশা রাজ্যে চলতি মাসেই বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হন পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দা এক মুসলিম যুুবক। তাকে মারধর ও ‘জয় শ্রীরাম’ বলার জন্য শারীরিক নির্যাতন করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী এই রাজ্যটিতে সাম্প্রতিক সময়ে অনেকগুলো ঘটনা সামনে এসেছে যেখানে বাংলাভাষী শ্রমিক, ফেরিওয়ালাদের বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করে গণপিটুনি বা হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি