ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫

১৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২, ০৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা লাগামহীন শোষণের শিকার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮:৩৯, ২৭ নভেম্বর ২০২৫

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা লাগামহীন শোষণের শিকার

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের ওপর ‘ব্যাপক ও পদ্ধতিগত’ শোষণ, প্রতারণা এবং বাড়তে থাকা ঋণ-দাসত্ব (ডেট বন্ডেজ) চলছে। মালয়েশিয়ায় বর্তমানে ৮ লাখের বেশি বাংলাদেশি বৈধভাবে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ করছেন। দেশটির বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে বাংলাদেশিরা সংখ্যায় সবচেয়ে বড়। জাতিসংঘের পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, হাজার হাজার শ্রমিক এখনও বাংলাদেশেই আটকে আছেন বা মালয়েশিয়ায় গিয়ে শোষণের শিকার হচ্ছেন। কারণ তাদের অনেকেই সরকার নির্ধারিত ফি-এর পাঁচগুণ পর্যন্ত অর্থ দিয়ে বিদেশে গিয়েছেন। মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি এসব কথা লিখেছেন সংগঠনটির নিজস্ব ওয়েবসাইটে। এতে তিনি আরও লিখেছেন, অন্য নির্যাতনের মধ্যে রয়েছে মালয়েশিয়ার নিয়োগদাতাদের হাতে শ্রমিকদের পাসপোর্ট জব্দ, ভুয়া চাকরির প্রতিশ্রুতি, চুক্তি এবং প্রতিশ্রুত সুবিধার মধ্যে বৈষম্য এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাগুলোর পর্যাপ্ত সহায়তার অভাব। এ বিষয়টি মালয়েশিয়ায় সাধারণ ঘটনা। 

যেসব শ্রমিক যথাযথ নথিপত্র ছাড়াই সেখানে থাকেন, তারা গ্রেফতার, আটক, নির্যাতন এবং মালয়েশিয়ার কঠোর ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী দেশে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকিতে থাকেন। এই আইন অনিয়মিত প্রবেশকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ নিয়মিত ইমিগ্রেশন অভিযান চালায় এবং প্রায় ১৮,০০০ অভিবাসী, শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীকে বিভিন্ন আটকশিবিরে বন্দি করে রেখেছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন মালয়েশীয় কারখানার বিরুদ্ধে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। একইভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন ফোর্সড লেবার রেগুলেশন, যা ২০২৭ সালে কার্যকর হবে, জোরপূর্বক শ্রমে তৈরি পণ্যের ওপর বাণিজ্যিক সীমাবদ্ধতা আরোপ করবে। শ্রমিকদের ঋণদাসত্ব ও প্রতারণার মতো ঘটনা এই নতুন বিধানের আওতায় পণ্য বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারির কারণ হতে পারে। 

বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারসহ অন্য শ্রমিক পাঠানো ও শ্রমিক গ্রহণকারী দেশ, এবং যেসব দেশে এসব কোম্পানির সদর দফতর- যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরাষ্ট্র ও বৃটেন- তাদের দায়িত্ব হলো যেন শ্রম অভিবাসন এমনভাবে পরিচালিত হয়, যাতে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষিত থাকে। মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট সব দেশকে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দ্রুত অভিযোগগুলো তদন্ত করতে হবে এবং কার্যকর প্রতিকার নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেছেন- ‘জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন বা কোনো ধরণের প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা’ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন। 

মালয়েশিয়া থেকে যারা পণ্য আমদানি করেন, সেই আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের উচিত ফেয়ার লেবার অ্যাসোসিয়েশনের গাইডেন্স ফর রেসপনিসিবল রিক্রুটমেন্টকে অনুসরণ করা। এই নির্দেশনায় ক্রেতাদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে যাতে তারা ‘দায়িত্বশীল নিয়োগের খরচ’ তাদের ব্যয়ের অংশ হিসেবে ধরে এবং সরবরাহকারীরা যাতে এই খরচ ইনভয়েসে যুক্ত করে। পাশাপাশি ক্রেতাদের উচিত অভিবাসী শ্রমিকদের আইনগত সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার উচিত অবিলম্বে শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ করা। যেসব দেশের অর্থনীতি অভিবাসী শ্রমিকদের ঘামে চলমান- তাদের সবারই উচিত দ্রুত সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেয়া, যাতে আরও নিষেধাজ্ঞা ঝুঁকি এড়ানো যায় এবং হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ কমানো যায়।

উৎস:মানবজমিন

আরও পড়ুন