শাহরিয়ার মিল্টন,শেরপুর থেকে
প্রকাশ: ০২:৩৯, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবি -বাংলার চোখ
নির্বাচনী প্রচারণায় যেখানে সাধারণত প্রার্থীরা একতরফা বক্তব্য প্রদান করেন, সেখানে শেরপুর-১ আসনে ব্যতিক্রমী এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হাফেজ রাশেদুল ইসলাম। গতানুগতিক জনসভার ধারা ভেঙে তিনি সরাসরি সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ ও পরামর্শ শোনেন।
এ লক্ষ্যে শেরপুর-১ (সদর) আসনের উন্নয়ন ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় ও পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শেরপুর পৌরসভার নিউ মার্কেট এলাকায় অবস্থিত নিউ আলীশান রেস্টুরেন্ট এন্ড কমিউিনিটি সেন্টারে ১৩ ডিসেম্বর রাতে এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন।শেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফেজ মো. রাশেদুল ইসলাম ।
জেলা আমীর মাওলানা হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন হাফেজ জাকারিয়া আব্দুল বাতেন, ডা. মো. আনোয়ার হোসেইন, মাওলানা নূরে আলম সিদ্দিকী, মাওলানা আব্দুল আওয়াল প্রমুখ। সভায় শেরপুর-১ আসনের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, কর্মসংস্থান, নারীর অধিকার, কৃষি, পর্যটন, খেলাধূলা, সংস্কৃতিসহ সকল বাস্তব সমস্যা সনাক্ত করে সবার অংশগ্রহণে উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরির জন্য বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন পরামর্শ গ্রহণ করা হয়। এতে শেরপুরের ডাক্তার, শিক্ষক, আলেম-ওলামা, সাংবাদিক, লেখক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন এবং নিজেদের সমস্যা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।
সভায় এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, “জেলায় বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা নেই। ব্যবহারিক শিক্ষার সুযোগ সীমিত। এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাকটিভিটিজ ও সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর যথেষ্ট অভাব রয়েছে।”
নারীদের পক্ষ থেকে এক বক্তা বলেন, “মার্কেট, হাসপাতাল ও জনসমাগমস্থলে নারীদের জন্য নামাজ আদায়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। কর্মজীবী নারী ও জরুরি প্রয়োজনে বাইরে থাকা নারীদের ওয়াক্ত মতো নামাজ আদায়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।”
শিক্ষাক্ষেত্রের সংকট তুলে ধরে চরশেরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, বাল্যবিবাহের কারণে ঝরে পড়ছে বহু শিক্ষার্থী। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবিও জানান তিনি।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও প্রবাসীদের কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন স্থানীয় এক ব্যাংক কর্মকর্তা।
জনগণের এসব বক্তব্যের প্রেক্ষিতে হাফেজ রাশেদুল ইসলাম বলেন, “আমি নির্বাচিত হলে কেবল জামায়াতে ইসলামীর এমপি হবো না, দল-মত নির্বিশেষে পুরো শেরপুরবাসীর এমপি হিসেবে কাজ করবো।” তিনি আরও বলেন, নির্বাচিত হলে স্বাস্থ্যখাতে গ্রাম পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে শক্তিশালী করা হবে এবং একটি কার্যকর রেফারেল সিস্টেম চালু করা হবে, যাতে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসার জন্য ঢাকামুখী হতে না হয়। পাশাপাশি ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের সহায়তায় শেরপুরের সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন তিনি।
সভায় অনেকেই লিখিতভাবে নিজেদের মতামত ও পরামর্শ জমা দেন। আয়োজকদের মতে, মৌখিক বক্তব্যের পাশাপাশি শত শত লিখিত প্রস্তাব জমা পড়েছে, যা শেরপুরবাসীর উন্নয়ন প্রত্যাশা ও অংশগ্রহণের আগ্রহের প্রতিফলন।