ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫

১৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২, ০৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

মানবতাবিরোধী অপরাধে

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৯:০২, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

ফাইল ছবি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। ফলে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যেতে চাইলে আজ থেকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে সংক্ষুদ্ধ পক্ষকে।

বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন প্রসিকিউশন এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পেয়েছেন। এই রায়ের কপি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কখন পাঠানো হবে এটি রেজিস্টার সিদ্ধান্ত নিবেন। এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ পূর্ণাঙ্গ রয়ের কপি হাতে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে, আইনি সুযোগ না থাকায় আসামি শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন কোনো কপি পাননি বলে জানিয়েছেন।

এর আগে গত ১৭ই নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এদিন দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে ছয় অধ্যায়ে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পড়া শুরু করেন বিচারিক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। পরবর্তীতে ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত রায় পড়া শেষে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে এ রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।

গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এটিই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলার রায়। এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। তাদের মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি আরেকটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বাংলাদেশে থাকা সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এসব সম্পদ জুলাই আন্দোলনে ‘শহীদ ও আহতদের ক্ষতিপূরণ’ হিসেবে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এদিকে এ মামলায় রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি  চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তিনিই এই মামলার একমাত্র গ্রেফতারকৃত আসামি। 

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলাটি হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনই এ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। প্রথম দিকে এ মামলায় শেখ হাসিনাই একমাত্র আসামি ছিলেন। তবে চলতি বছরের ১৬ মার্চ এ মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করার আবেদন করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। পরে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন।

একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ই মে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। গত ১লা জুন শেখ হাসিনাসহ এই ৩ আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে ৩ আসামির বিরুদ্ধে মোট ৫টি অভিযোগ আনা হয়।
অভিযোগগুলো হলো- গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে নির্মূল করার নির্দেশ প্রদান, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা, রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ৬ আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পোড়ানোর অভিযোগ। এই ৫ অভিযোগে তিনজনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এরমধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এ মামলার একমাত্র গ্রেপ্তার। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের দিন (১০ জুলাই) সাবেক আইজিপি মামুন গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এরপর ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন। পরবর্তীতে গত ১২ অক্টোবর এ মামলায় যুক্তিতর্ক শুরু হয়। যা শেষ হয় গত ২৩ অক্টোবর। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড চান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

উৎস:মানবজমিন

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন