ঢাকা, রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

ভূমিকম্পে বিদ্যালয়ে বড় ফাটল, ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান অব্যাহত 

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০০:৫৩, ২৯ নভেম্বর ২০২৫

ভূমিকম্পে বিদ্যালয়ে বড় ফাটল, ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান অব্যাহত 

সংগৃৃহীত

দীর্ঘ ১৫ বছর আগে টিনশেড ওয়ালের ঘরটিকে পরিত্যক্ত এবং ৫ বছর আগে দোতলা ভবনটিও ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এরপর তার পাশেই দুই কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি থাকায় পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই পাঠদান দেয়া হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। সম্প্রতি ভূমিকম্পের পর দেখা দিয়েছে বড় ধরনের ফাটল, দুর্ঘটনার শঙ্কায় উদ্বিগ্ন থাকছেন অভিভাবকরা।

ফরিদপুরে পরিত্যক্ত ভবনেই চলছে রিয়াজউদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান। কোমলমতি শিশুরা আতঙ্ক আর ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে করছে ক্লাস। ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষকরা। স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, বিকল্প ভবন না থাকায় বাধ্য হয়েই সেখানে ক্লাস নিতে হচ্ছে। আর এতে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমছে বিদ্যালয়টিতে। তবে শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়েছে, দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলার প্রায় সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন করে বহুতল ভবন নির্মিত হলেও ভিন্ন চিত্র ফরিদপুর পৌরসভার পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার রিয়াজউদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।

সম্প্রতি ভূমিকম্পের দিনে পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ন ভবন দুইটিতে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের ফাটল। ওই দিন স্কুল বন্ধ থাকায় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় শিক্ষার্থীরা। তারপরেও ওই ভবন দুটিতেই ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ক্লাস করার সময় পলেস্তারা খসে পড়ে শিক্ষার্থীদের গায়ের ওপর, আতঙ্কের মধ্যে দিয়েই ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, পরিত্যক্ত ভবনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। টিনশেড ওয়ালের ভবনটিতে দেখা দিয়েছে ফাটল। শিক্ষকদের রুমেরও একই অবস্থা। পলেস্তারা খসে পড়েছে। বাইরে বসে আছে অভিভাবকরা। বিদ্যালয়টির নেই কোনো সীমানা প্রাচীরও।

বিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, ক্লাস করার সময় উপর থেকে পলেস্তারা খসে গায়ের উপর পড়ে। অনেক সময় গায়ে পড়ে ব্যথা পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ভয়ে ভয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে ক্লাস করতে হয়, পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারি না।

অভিভাবকরা জানান, ওই ভবন দুটিতে সন্তানদের ক্লাস করতে পাঠানোর পর বাইরে বসে থাকেন ভয়ে, কখন যে ভেঙে পড়ে এই আতঙ্কে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত স্কুলটির এমন অবস্থা কারোর কোনো মাথা ব্যাথা নেই। অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন বহুতল ভবন হলেও এই স্কুলটিতে হয়নি কোনো ভবন। তারা সন্তানদের ভর্তি করে বিপদে পড়েছেন, এখন না পারছেন সরিয়ে নিতে না পারছেন এখানে রাখতে।

তারা আরও জানান, অনেকেই তাদের সন্তানকে অন্য স্কুলে নিয়ে গেছে। আমরাও বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে অন্য স্কুলে সন্তানদের নিয়ে যাবো। স্কুলটিতে নতুন ভবন নির্মাণ করা না হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় চলে আসবে।

অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলছেন, পৌরসভার মধ্যে অবস্থিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমন চিত্র দেশের মধ্যে আর কোথাও নেই। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে এই বিদ্যালয়ের চিত্র এমন রয়ে গেছে। দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও তাদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। কারণ তাদের সন্তানরা তো এই স্কুলে পড়ে না।

রিয়াজউদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাজমা আক্তার বলেন, ‘১৫ বছর আগের টিনশেড ওয়ালের ঘরটি পরিত্যক্ত এবং ৫ বছর আগে দোতলা ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। স্কুলে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি থাকায় বাধ্য হয়েই শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান করানো হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে স্কুলটিতে শিক্ষার্থী রয়েছে ৪২৫ জন। আর শিক্ষক রয়েছেন ১২ জন। শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়ার সময় আমরাও ঝুঁকির মধ্যে থাকি, কখন যেন দুর্ঘটনা ঘটে যায়। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে যাচ্ছেন অন্য স্কুলে। এ কারণে দিন দিন স্কুলটিতে কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। ভূমিকম্পের পর থেকে আরও বেশি ফাটল দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমরাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।’

ফরিদপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরেছি। সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। দ্রুতই যাতে ভবন নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হয়, সেই ব্যবস্থা করা হবে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যাতে পড়ালেখার কোনো ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখা হবে।’

আরও পড়ুন