ঢাকা, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫

২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

সবুজ পাহাড়ে উচ্চশিক্ষার নতুন দিগন্ত রাঙামাটির রাবিপ্রবি

আলমগীর মানিক,রাঙামাটি

প্রকাশ: ০৩:২২, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫

সবুজ পাহাড়ে উচ্চশিক্ষার নতুন দিগন্ত রাঙামাটির রাবিপ্রবি

.

পার্বত্য চট্টগ্রামের সবুজ পাহাড়, নৈসর্গিক সৌন্দর্য আর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির মাঝে উচ্চশিক্ষার এক সম্ভাবনাময় কেন্দ্র হিসেবে দ্রুত বিকশিত হচ্ছে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (আরএমএসটিইউ)। নিজস্ব জমি, আধুনিক অবকাঠামো ও পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাসকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন পাহাড়ে উচ্চশিক্ষার আলোকবর্তিকা হয়ে উঠছে।

২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত আরএমএসটিইউ ২০১৫ সালে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে যাত্রা শুরু করে। নানা সীমাবদ্ধতা পেছনে ফেলে ৬৪ একর সবুজে ঘেরা স্থায়ী ক্যাম্পাসে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকেই দ্রুত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও একাডেমিক বিস্তারে এগিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

বর্তমানে দুটি অ্যাকাডেমিক ভবন, দুটি প্রশাসনিক ভবন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, আধুনিক প্রশাসনিক ভবন-১, ক্যাফেটেরিয়া, নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা এবং স্বাধীনতার চেতনা বহনকারী বিজয় স্মৃতিস্তম্ভ—সব মিলিয়ে সমৃদ্ধ হচ্ছে আরএমএসটিইউ। পাহাড়ের পরিবেশ ও প্রকৃতিকে অক্ষুণ্ণ রেখে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় জায়গায় সীমিত নির্মাণ কাজ চলছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি বিভাগ; কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানেজমেন্ট, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্সেস টেকনোলজিতে বর্তমানে পড়ছেন প্রায় এক হাজার একশত শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা বলছেন, নতুন বিভাগ চালু হলে উচ্চশিক্ষার পরিসর আরও বড় হবে, গবেষণার সুযোগও বাড়বে।

রাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা জানান, “আমরা আশা করি এখানে গবেষণা সুযোগ বাড়বে। নতুন বিভাগ চালু হলে পাহাড়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষায় আরও বড় ক্ষেত্র তৈরি হবে।” এছাড়াও বর্তমানে; প্রয়োজনীয় শিক্ষক সংকট; কেন্ট্রিনে খাবার সংকট; বাস সংকট থেকে শুরু করে এখনো পযন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা যায়নি। অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলো দ্রুতগতিতে বাস্তবায়িত হয়ে গেলে শিক্ষার পরিবেশ আরো গতিশীল হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, রাঙামাটি রাবিপ্রবি'র প্রকল্প পরিচালক আব্দুল গফুর জানিয়েছেন, “পাহাড়ের পরিবেশ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়’’ এ বিষয়টি আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। ন্যূনতম কাটাছেঁড়া করে চারটি নতুন ভবনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। খুব শিগগিরই আরএমএসটিইউ একটি মানসম্মত আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পুরোপুরি রূপ নেবে।”

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে আরও পাঁচটি নতুন বিভাগ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক বিস্তার আরও সমৃদ্ধ হবে বলে মন্তব্য করে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আতিয়ার রহমান বলেন, “নতুন বিভাগ অনুমোদন পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাঠামো আরও শক্তিশালী হবে। পাহাড়ে আধুনিক উচ্চশিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক মান বাড়ানোই আমাদের লক্ষ্য। শিক্ষার্থীর কল্যাণ, গবেষণা এবং পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি।”

অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আধুনিকায়ন, একাডেমিক সম্প্রসারণ এবং শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ; সব মিলিয়ে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পার্বত্য চট্টগ্রামে উচ্চশিক্ষার নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। সবুজ পাহাড়কে আলিঙ্গন করে এগিয়ে চলা এই প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে দেশের অন্যতম মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে; এমনটাই আশা করছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সবাই।

আরও পড়ুন