ঢাকা, রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে উদগ্রীব মেক্সিকো

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৬:০৯, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে উদগ্রীব মেক্সিকো

ছবি :সংগৃহীত

মেক্সিকোর পার্লামেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে উদগ্রীব বলে জানিয়েছে দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাস। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) মেক্সিকোতে এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানানো হয়।

এ সময় মেক্সিকো-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপও গঠন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন মেক্সিকোয় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী।

অনুষ্ঠান শুরুর আগে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে মেক্সিকো পার্লামেন্টের অধিবেশন কক্ষে আমন্ত্রণ জানানো হয়, যেখানে তিনি কর্মরত আইনপ্রণেতাদের ভোটাভুটির কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন। অনুষ্ঠানে যোগ দেন জর্ডানের রাষ্ট্রদূত আদলি কাসেম আলখালেদি এবং আইভরি কোস্টের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক কোরের ডিন রবার্ট লি।

অধিবেশন চলাকালে কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট কেনিয়া লোপেস রাবাদান রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজুল আনসারীকে স্বাগত জানিয়ে মেক্সিকোর সব আইনপ্রণেতার (এমপি) সামনে মেক্সিকো-বাংলাদেশ মৈত্রী গ্রুপের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।  


এ সময় দেশটির সরকার ও বিরোধীদলের সদস্যরা রাষ্ট্রদূত মুশফিককে পার্লামেন্টের ফ্লোরে স্বাগত জানান।

পরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সংযুক্ত সভাকক্ষে শুরু হয় মেক্সিকো-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। 

উদ্বোধনী বক্তব্যে মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ডেপুটি ফ্রান্সিসকো জাভিয়ের এসত্রাদা দোমিন্সেস দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব, সহযোগিতা এবং পার্লামেন্টারি ডিপ্লোম্যাসির গুরুত্ব তুলে ধরেন। 

তিনি বাংলাদেশের ইতিহাস, অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা এবং বিশেষভাবে বৈশ্বিক টেক্সটাইল শিল্পে বাংলাদেশের ভূমিকা উল্লেখ করেন।

রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘আগামী বছর ফেব্রুয়ারির শুরুতে নোবেলজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রফেসর ইউনূসের নৈতিক শক্তি, আন্তর্জাতিক মর্যাদা এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতি আজীবন অঙ্গীকার-আমাদের গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধারে নতুন আস্থা তৈরি করেছে।’

রাষ্ট্রদূত ২০২৪ সালের আগস্টে ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের কথাও স্মরণ করেন, ‘২০২৪ সালের আগস্টে আমাদের ছাত্রসমাজ, শ্রমজীবী মানুষ, নারী, শিশু, সাংবাদিক- হাজারও নাগরিক অকল্পনীয় ত্যাগ স্বীকার করে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে এনেছে। তাদের আত্মত্যাগ নতুন ইতিহাস রচনা করেছে।’

তিনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তি রচনা করা জাতীয় নেতাদের অবদান তুলে ধরে বলেন, ‘১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্র পুনরুদ্ধারের দীর্ঘ সংগ্রামের নেতৃত্ব দেন। আর ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের জাতীয় পরিচয়ের ভিত্তি গড়ে তোলেন এবং পরবর্তী সময়ে সরকার পরিচালনার দায়িত্বে এসে প্রবর্তন করেন বহুদলীয় গণতন্ত্র।’

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘মেক্সিকোর শক্তিশালী ও উন্মুক্ত সংসদীয় চর্চা গণতন্ত্রের পথে রূপান্তরমান দেশগুলোর জন্য অনুপ্রেরণা। বাংলাদেশের নবগঠিত সংসদও সেই স্বচ্ছতার পথেই এগোচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে ডেপুটি ইমা ইয়োরদানা গারাই লোরেদো, ডেপুটি পেদ্রো ভাসকেস গনসালেস (চেয়ারম্যান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটি) এবং ডেপুটি হেসুস ভালদেস পেনা বক্তব্য রেখে দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক, পরিবেশ ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

রেকর্ড করা ভিডিও বার্তায় সিনেটর ইমানুয়েল রেয়েস কারমোনা মৈত্রী দলের গঠনকে অভিনন্দন জানান। তিনি উল্লেখ করেন, ‘চলতি বছর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই উদ্যোগ নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে I’

অনুষ্ঠানে সংসদীয় দলের বিশেষ আমন্ত্রণে যোগ দেন জর্ডান ও আইভরি কোস্টের রাষ্ট্রদূত। উভয়ের বক্তব্যে মেক্সিকো-বাংলাদেশ সংসদীয় গ্রুপের সফলতা কামনা করেন।

অনুষ্ঠান শেষে সংসদীয় দলের আনুষ্ঠানিক যাত্রার নথিতে সই করেন রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। এছাড়া, তিনি সংসদের দর্শনার্থী বইয়েও সই করেন। স্মারক উপহার বিনিময় ও গ্রুপ ছবির তোলার মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন