প্রেস ডেস্ক
প্রকাশ: ০১:০৬, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবি :সংগৃহীত
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে সুনির্দিষ্টভাবে দলিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করা এবং তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কী ভূমিকা রাখতে পারেন সে বিষয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে আজ ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বুধবার), শফিকুল কবির মিলনায়তন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা-এ বিডিইআরএম এবং নাগরিক উদ্যোগ এর আয়োজনে ‘দলিত জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন: চ্যালেঞ্জ ও উত্তরনের উপায় শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিবৃন্দ এবং গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নাজমুল হক প্রধান, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল; খালেকুজ্জামান লিপন, সহ সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ); আব্দুল্লাহ আল ক্বাফি রতন, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি); তৌফিক উজ জামান, যুগ্ম সদস্য সচিব, জাতীয় শ্রমিক শক্তি; জাসেম আলম, সদস্য, বাংলাদেশ যুব ফেডারেশন; সীমা দত্ত, সভাপতি, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র; সুকৃতি কুমার মন্ডল, সভাপতি, বাংলাদেশ মাইনোরিটি জনতা পার্টি; এডভোকেট উৎপল বিশ্বাস, সদস্য সচিব, জাত-পাত বিলোপ জোট; দিদারুল ভূইয়া, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন; এবং মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম, নাগরিক ঐক্য।
দলিত প্রতিনিধিদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ রবিদাস ফোরাম (বিআরএফ) এর সভাপতি চাঁনমোহন রবিদাস, বিডিইআরএম-ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি গগণ লাল, নারায়নগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি রাজেন্দ্র কুমার দাস, বিডিইআরএম ফেনী জেলা শাখার সভাপতি বলরাম দেবনাথ, দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি সবুজ রবিদাস, সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি দুলাল দাস, বাগেরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজেন্দ্র নাথ রায়, যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বাবলু দাস, নওগাঁ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিরেন রবিদাস, ফরিদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রাম চন্দ্র মালো, পটুয়াখালী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কল্যাণ বিশ্বাস, বগুড়া জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় চন্দ্র রবিদাস, গবেষক এবং উন্নয়নকর্মী মাজহারুল ইসলাম, নারীপক্ষের প্রতিনিধি জাহানারা খাতুন, নাগরিক উদ্যোগ এর অ্যাডভোকেসি অফিসার মোহন রবিদাস, কাউন্সিল অব মাইনোরিটি এর নির্বাহী পরিচালক খালিদ হোসেন।
বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিপন কুমার রবিদাস মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে দলিত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহনের জায়গায় একটি বিশাল শুন্যতা রয়ে গেছে। বর্তমানে আমরা আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। আমরা ইতোমধ্যে লক্ষ্য করছি দলিত জনগোষ্ঠীর অনেক প্রতিনিধি রাজনীতিতে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের মনোনয়ন প্রদানের কথা ভাবছেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে দলিত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বাড়তে শুরু করেছে। আমরা প্রত্যাশা করছি বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে থেকে প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রদানের মাধ্যমে দলিতদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবেন।
নাগরিক উদ্যোগ এর প্রধান নির্বাহী জনাব জাকির হোসেন তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ দলিত জনগোষ্ঠী হওয়ার পরেও জাতীয় রাজনীতিতে তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো রাজনীতিতে তাদের প্রবেশে বাধা। এই বাধা কিভাবে দূর করা যায় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের নিকট সে পরামর্শ কামনা করেন।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এর নেতা খালেকুজ্জামান লিপন বলেন, নির্বাচনের আগেই নির্বাচনে অংশগ্রহনে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। নির্বাচনে জামানত ২০,০০০/- থেকে বাড়িয়ে ৫০,০০০/- নির্ধারণ করা হয়েছে। পোষ্টার ও ব্যানারের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য বিলবোর্ডের ব্যবহার করা যাবে। তিনি তাদের দলের নির্বাচনী ইসতেহারে আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠীর অধিকারের বিষয়ে সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান। তিনি উল্লেখ করেন, জুলাই অভ্যুত্থানে ৮৩৬ জন নিহত হয়েছেন যাদের মধ্যে ৫১২ জনই নিম্ন আয়ের শ্রমজীবি মানুষ। সুতরাং শ্রমজীবি ও মেহনতিদের ত্যাগকে অবমূল্যায়নের সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদারুল ভুঁইয়া বলেন, আগামী নির্বাচনে আমাদের জোট প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে থেকে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ মনোনয়ন দেবে। বাংলাদেশে ৭৫ লক্ষ দলিত যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন, তাহলে কমপক্ষে ১০টি আসন নিজেদের শক্তিতে সংসদে নিশ্চিত করা সম্ভব।
জাতীয় শ্রমিক শক্তি এর যুগ্ম সদস্য সচিব জনাব তৌফিক উজ জামান বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে হলে তাদেরকে সংসদে আসতে হবে। তাদের নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। যে রাজনৈতিক দল দলিতদের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিতের কথা বলছে তাদের সাথে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র এর সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, আমাদের অনেক আইন ও নীতিমালা আছে কিন্তু এগুলোর বাস্তবায়ন নেই। ৫ আগস্ট ২০২৪ এর পর সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় অভিযুক্তরা কোন আইনজীবি পায়নি। দলিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনেক সম্ভাবনাময় ব্যক্তি আছেন। কিন্তু দলিত জনগোষ্ঠীর ঐক্যবদ্ধ না হবার কারণে তারা রাজনীতিতে অবদান রাখতে পারছে না। বাসদ (মার্কসবাদী) তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দলিতদের অধিকার সম্পর্কে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ এর সাবেক সভাপতি কৃষ্ণা লাল বলেন, বর্তমানে দলিত জনগোষ্ঠী শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। কিন্তু কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে তারা এখনো অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। তিনি আরো বলেন, কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যতিত তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ক্বাফি রতন বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররা কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেও সাধারণ মানুষ আন্দোলন করেছেন তাদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ৭৫ লক্ষ দলিত জনগোষ্ঠীর একজন প্রতিনিধি সংসদে থাকবে তা হতে পারে না। যদি কোন দলিত প্রতিনিধি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান তাহলে তার রাজনৈতিক দল তাদের মনোনয়ন দেবে বলে তিনি আধাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ) এর সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সাংসদ জনাব নাজমুল হক প্রধান বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের দেশ, এখানে রাজনীতিতেও বৈচিত্র্যের ছাপ থাকা প্রয়োজন। স্বাধীনতার যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ’৭১ এ আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম, সেই আকাঙ্ক্ষা এখনও পূরণ হয়নি। আমরা চাই একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে দলিত জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন তরান্বিত হোক।