ঢাকা, রোববার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫

৬ পৌষ ১৪৩২, ২৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

শোকে স্তব্ধ হাদির গ্রামের বাড়ি,শেষ দেখাও হলোনা গ্রামের মানুষদের!

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯:৩০, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

শোকে স্তব্ধ হাদির গ্রামের বাড়ি,শেষ দেখাও হলোনা গ্রামের মানুষদের!

ছবি -বাংলার চোখ

দক্ষিনের জেলা ঝালকাঠিতে শোকে স্তব্ধ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরীফ ওসমান হাদির গ্রামের বাড়ি। হাদিশূণ্য তার বসতভিটায় ভীড় করছেন চেনা-অচেনা বহু মানুষ। শোকের মাতুম চলছে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঝালকাঠির এসএস কামিল মাদরাসায়। শেষবার মত দেখতে না পারার আক্ষেভ রয়ে গেছে  গ্রামবাসী। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যারকারির সর্বোচ্চ বিচার দাবি করেছে জেলাবাসী।

হাদি স্মরণে অর্ধবেলা সকল দোকানপাট বন্ধ :

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি সন্ত্রাসীদের গুলিতে মৃত্যুবরণ করায় তাঁর নিজ জন্মভূমি গ্রামের বাড়িসহ উপজেলা জুড়ে এখনো চলছে শোকের মাতম। পরিবার ও এলাকাবাসীর কান্না ও হাজারী যেন থামছেই না। তাঁরা এতো কম বয়সে ওসমান হাদির চলে যাওয়া কিছুতেই মানতে পারছে না।
শরিফ ওসমান হাদির স্মরণে শনিবার দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত উপজেলা ব্যবসায়ীর উদ্যোগে সকল দোকানপাট বন্ধ রাখা হয় এবং সকাল থেকে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
 এবিষয়ে নলছিটি উপজেলা ব্যাবসায়ী সমিতির উদ্যোগ সকালে শহরে মাইকিং করা হয়। 
নলছিটি পৌর বস্ত্র ব্যাবসায়ী কমিটির সভাপতি নেওয়াজ হোসাইন জানান,  নলছিটি উপজেলাবাসীর পক্ষে সকল ব্যাবসায়ীরা শরিফ ওসমান হাদিকে সম্মানে এ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। 
 

গায়েবানা জানাজা: 

 হাদির মৃত্যুতে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনায় ঝালকাঠিতে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বাদ জোহর ঝালকাঠি শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে এই গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজায় শহর ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মসজিদ থেকে আগত বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেন। জানাজা শেষে মরহুম শরীফ ওসমান হাদির আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। গায়েবানা জানাজায় স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

অংশগ্রহণকারীদের মতে, শরীফ ওসমান হাদি ছিলেন একজন সাহসী ও প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। তাঁর অকাল মৃত্যু শুধু পরিবার কিংবা সহকর্মীদের জন্য নয়, বরং পুরো সমাজের জন্যই এক অপূরণীয় ক্ষতি।
জানাজায় অংশ নেওয়া অনেকেই বলেন, অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকার জন্য শরীফ ওসমান হাদি সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।

উল্লেখ্য, শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে দেশজুড়ে বিভিন্ন মহলে শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন ইতোমধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। 

সুগন্ধা নদীর তীরে গড়ে ওঠা শহর নলছিটির টিনসেড এই ঘরেই ১৯৯৩ সালের জন্ম নিয়েছিলেন শরীফ ওসমান হাদী। নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হাদীর বেড়ে ওঠা এখানেই। বাবা মাওলানা আবদুল হাদী ও মা তাসলিমা হাদির ঘরে ৬ সন্তানের মধ্যে হাদী ছিলেন সবার ছোট। ছিলেন অনেক আদরের । তার শিক্ষক , সহপাঠি ও এলাকাবাসী জানান, শৈশব থেকেই হাদী ছিলেন প্রতিবাদের এক কন্ঠস্বর। ২০০০ সালে ঝালকাঠির নেছারাবাদ এন এস কামিল মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেনীতে ভর্তি হন তিনি। সেখান  থেকে ২০০৭ সালে দাখিল ও ২০০৯ সালে আলীম শেষ করেন। তখন জেলা পর্যায়ে অনেক পুরুস্কার অর্জন করেছেন তিনি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমির পাঠ চুকান। স্বজনদের পাশাপাশি গ্রামবাসী , শিক্ষক ও সহপাঠিদের কাছে হাদি যেন কেবল একটি নাম নয়, চব্বিশের গনঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়ায় প্রতিষ্ঠানের প্রতিচ্ছবি হয়েছেন। তাইতো তার নিহতের ঘটনা মানতে পারছেনা কেউই। হাদির মৃত্যুর খবর শুনে চেনা, অচেনা বহু মানুষ ভীড় করেন তার ঘরের সামনে। নলছিটিতে থাকা হাদির বোন আর ভগ্নপতি ঢাকা চলে যাওয়া বাড়িটি এখন শূন্য পরে আছে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ওসমান হাদির শেষ ইচ্ছে ছিলো তাকে যেন তার বাবার কবরের পাশে করা হয় সমাহিত । তবে সে সিদ্ধান্ত এখন বাস্তবায়ন হয়নি। শেষ বারের মত ওসমান হাদিকে দেখতে পারছেননা ঝালকাঠিবাসী। বিপ্লবী ওসমান হাদির হত্যায় সারা দেশের মত উত্তাল হয়ে ওঠে তার নিজ জেলা ঝালকাঠি। ঘাতকের বুলেট কেরে নিয়েছে  বিপ্লবী শরীফ ওসমানকে। তবে তিনি হাজার বছর বেঁচে থাকবেন তার কর্মের মধ্যে। 
 

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন