ঢাকা, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

৯ পৌষ ১৪৩২, ০৩ রজব ১৪৪৭

শেরপুরে পলিনেট হাউসে সারা বছর সবজি চাষ

শাহরিয়ার মিল্টন,শেরপুর থেকে

প্রকাশ: ০১:৪৩, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫

শেরপুরে পলিনেট হাউসে সারা বছর সবজি চাষ

ছবি -বাংলার চোখ

পলিনেট হাউস বা কৃষি ঘরে সারা বছর সবজি চাষ করে কৃষিতে নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছেন শেরপুরের কৃষকরা। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সারা বছর নিরাপদ সবজি উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তি পলিনেট হাউসে চাষাবাদে কৃষকদের এখন মুখে হাসি ফুটেছে।

বিশেষ ব্যবস্থায় সারা বছরই সবজি চাষাবাদ করছেন কৃষকরা। উৎপাদিত সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে চলে যাচ্ছে। ভাল বাজারমূল্য ও ফলনে কৃষকরাও খুশি।

কৃষি বিভাগ জানায়, পলিনেট হাউসে সবজি চাষে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। তাপমাত্রাও থাকে নিয়ন্ত্রণে। জৈব সার প্রয়োগেই যথেষ্ট। পোকার আক্রমণ ও প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে ফসলকে রক্ষা করে।

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি প্রকল্পে ২০২৩ সালে শেরপুর সদরে ২টি পলিনেট হাউস তৈরি করে। সবজি চাষ ও চারা উৎপাদনে বেশ সাফল্য পান কৃষক কামরুল হাসান ও উদ্যোক্তা ফেরদৌস মিয়া। সরকারি উদ্যোগে তৈরি করা কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারে উচ্চমূল্যের সবজি ফলানোয় কৃষকরা হয়ে উঠছে স্বাবলম্বী। তাদের দেখাদেখি অন্য কৃষকরাও এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

পলিনেট হাউস তৈরিতে সহনীয় তাপমাত্রা, পলিথিন, নেট, লোহা বা বাঁশ দিয়ে জমির চার পাশে নেটে ঘেরা হয়। ওপরের অংশে দিতে হয় পলিথিন। এতে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রিত হয়। চারা উৎপাদনে জৈবসার, নারিকেলের খোসা পচিয়ে প্রাকৃতিক তন্তু, হালকা ওজনের পানি ধারণের ক্ষমতা রাখে। যাকে বলা হয় কোকোপিট। মাটির বিকল্প বা মাটিতে বীজতলা করতে হয়। পলিব্যাগ,পলিনেট হাউসে মাটি দ্রুত শুকিয়ে যায়। কোকোপিট পানি ধরে রাখে। গাছকে আর্দ্র রাখে। পানিও দিতে হয় কমই। মাটিকে ঝরঝরে রাখে। শেকড়ে বাতাস পায়। ফলে পচনশীল রোগও কম হয়।

পলিনেট হাউসে যেসব সবজি চাষ হয়। সেগুলোর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ হয়। ভেতরে চাষাবাদে পলিমাটি, ছাই, গোবর, খৈল মিশ্রণে প্রস্তুত হয় চাষের জমি। পলিথিনের ব্যবহারে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ভেতরে প্রবেশে বাধা পায়। অতিবৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ফসল ও চারা অক্ষত থাকে। পলিনেট হাউসে বছরজুড়ে ধনেপাতা, ফুলকপি, ক্যাপসিকাম, ব্রুকলি, চালকুমড়া, পুদিনা পাতাসহ অসময়ের সবজি,চারা উৎপাদন হয়। গ্রীষ্মকাল ও শীতকালেও সবজি চাষ হওয়ায় কৃষকের আয় হচ্ছে বছরজুড়েই। এই প্রযুক্তি ব্যবহারে সাফল্য পেয়েছেন শেরপুর সদর উপজেলার দিঘলদি মোল্লাপাড়ার কৃষক কামরুল হাসান। প্রায় ৩ বছর আগে গ্রামে ১০ শতক জমির ওপর পলিনেট হাউস তৈরি করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে। সবজি উৎপাদনের দায়িত্ব নেন কামরুল। গত তিন বছর পলিনেট হাউসে সবজি চাষে ১৫-১৬ লাখ টাকা আয় করছেন। ২ মাসে দেড় লাখ টাকার ধনেপাতা বিক্রি করছেন। খরচ বাদে লাভ হয়েছে ১ লাখ টাকা। অসময়ে ৪০০ টাকা কেজিতে ধনেপাতা বিক্রি করেছেন। সর্বশেষ ১০০ টাকায় বিক্রি করেন ধনেপাতা। মাসে ৬ মণ পাতা বিক্রি হয়। গড়ে ১২ হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। শীতের আগে ১ কেজি ফুলকপি ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। পলিনেট হাউসে চাল কুমড়াও হচ্ছে। ১ লাখ টাকার কুমড়া বিক্রির আশা তার। সাফল্যে ১২ শতক জমিতে ৩ লাখ টাকা খরচে পলিনেট হাউস তৈরি করেছেন কামরুল। ভবিষ্যতে ২ বিঘায় পলিনেট হাউস তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চরমোচারিয়া ইউনিয়নের টালিয়াপাড়ায় পলিনেট হাউসে চারা উৎপাদন করছেন শিক্ষক ও উদ্যোক্তা ফেরদৌস মিয়া।

২০২৩ সালে জেলা কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় ১২ শতক জমিতে পলিনেট হাউস তৈরি করে সারা বছর নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় ৬০ হাজার বিষমুক্ত সবজির চারা উৎপাদন করছেন। আড়াই লাখ টাকা খরচে বছরে লাভ হয়েছে ৫ লাখ টাকা। ফেরদৌস মিয়া সিডলিং ট্রেতে কোকোপিট ব্যবহারে বছরজুরেই মৌসুমভিত্তিক উন্নতমানের সবজির চারা বিক্রি করছেন। অসময়ে গ্রীষ্মকালীন মরিচের চারা বিক্রিতে ভাল লাভবান হয়েছেন। এবছরও দেড় লাখ মরিচের চারা বিক্রি করেছেন। প্রতিটি চারা তৈরিতে খরচ হয় ১ টাকা ৩০ পয়সা। বিক্রি করছেন ২ টাকা করে। সেপ্টেম্বর- ডিসেম্বর প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন। আরও ৬৫ শতক জমিতে ২-৩ টি পলিনেট হাউস তৈরি করবেন।

পলিনেট হাউসে ম্যানেজার ও ৪ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। স্থানীয়রা বলেন, অসময়ে সবজির চাহিদা বেশি থাকে। দামও বেশি থাকে। আগাম সবজি চাষে লাভবান হন কৃষকরা।

শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাখাওয়াত হোসেন  বলেন, পলিনেট হাউসে সবজির চারা ও সবজি দুটিই হয়। অসময়ে সবজি চাষ করে কৃষক অধিক লাভবান হচ্ছেন। বিশেষ করে বর্ষাকালে উচ্চমূল্যে সবজি বিক্রি করতে পারেন কৃষক। এ ছাড়া সারা বছরই চারাও পাওয়া যায়। দিনে দিনে বাড়ছে কৃষকদের আগ্রহ!

আরও পড়ুন