মহানন্দ অধিকারী মিন্টু, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫:৩৫, ২৪ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১৫:৩৬, ২৪ জুন ২০২৫
ছবি: বাংলার চোখ
খুলনা জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক উপশহর (বিনোদগঞ্জ) কপিলমুনি জৌলুস হারিয়ে এখন নিভু-নিভু প্রদীপ। এ বাজার থেকে সরকার বছরে প্রায় কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করলেও অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার ঐতিহ্যবাহী কপিলমুনি বাজার। এক সময় খুলনা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করা হতো মালামালের বাজার দর। খুলনা বিভাগের দক্ষিণাঞ্চলে লক্ষ লক্ষ মানুষের একমাত্র বড় মোকাম (বাজার) এটি। বাজারের পশ্চিম পাশে কপোতাক্ষ নদ আর বাজারে মধ্যেভাগ পূর্ব পাশে(উত্তর-দক্ষিণ) খুলনা-পাইকগাছা প্রধান সড়ক।
বাংলা ১৩৩৯ সালে রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু প্রতিষ্ঠা করেন বিনোদগঞ্জ (কপিলমুনি) বাজার। বাজারে বিদ্যুৎ এর আলোর ব্যবস্থা করেন রায় সাহেব বিনোদ বিহারি অথচ জেলাতেই তখন বিদ্যুৎ আসেনি। গুরুত্বপূর্ণ এই উপশহরকে বর্তমানে পৌরসভা করতে সবধরনের আনুষ্ঠানিক সম্পন্ন করা হয়। সেই সাথে খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার মানুষের দুর্ভোগ কমাতে দুই যুগ আগে উদ্বোধন করা হয় কপোতাক্ষ নদের উপর সেতু। দুই যুগ পার হলেও কপোতাক্ষ নদের উপর সেতু আজও বাস্তবায়ন হয়নি। বরং নদের বক্ষে কাটা হয়ে আছে ১৮টি পিলার। এইভাবে ধ্বংস হচ্ছে ঐতিহ্যের প্রতীক কপিলমুনি বাজার। সেই সাথে মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত কপিলমুনি বাজার আজ অবহেলায় হারাচ্ছে জৌলুস।অপরিকল্পিত দোকান, ইচ্ছে মত দখল, ময়লা আবর্জনা আর দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশের কারণে বাজারে প্রবেশ করা কঠিন। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বাজারের অলিগলিতে নোংরা কাদামাটিতে প্রবেশ করল কর্দামক্ত হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। বছরের পর বছর এই ভাবে চললেও উন্নয়নের বদলে বেড়েছে দখলদারদের প্রভাব।এলাকার প্রবীণ জনসাধারণের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কালের স্বাক্ষী বহনকারী কপোতাক্ষ নদের তীরে গড়ে উঠা পাইকগাছা উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল কপিলমুনি। কালের পরিক্রমায় কপিলমুনিতে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, খেলাধুলা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার নিজস্ব স্বকীয়তা দেশ-বিদেশে আজও সমুজ্জ্বল। রায় সাহেব বিনোদ বিহারি তৎকালীন সময় বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলেন ভরত চন্দ্র হাসপাতাল, কপিলমুনি সহচরী বিদ্যা মন্দির স্কুল, সহচরী সরবর, কপিলেশ্বরী কালী মন্দির সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান আর রাস্তাঘাট। খুলনা জেলার অন্যতম বাণিজ্যিক মোকাম রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু প্রতিষ্ঠিত বিনোদগঞ্জ বাজার বর্তমানে অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার কারণে ব্যবসায়ীদের দূর্ভোগের যেন অন্ত নেই। আর বাজারটি দীর্ঘদিন যাবৎ অভিভাবকহীন হয়ে পড়ায় পদে-পদে ব্যবসায়ীদের হয়রানী হতে হচ্ছে। বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপকালে জানান নানা দুর্ভোগের কথা। এমতাবস্থায় বাজারের সার্বিক উন্নয়ন কল্পে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। সরেজমিনে কপিলমুনি বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকগাছা উপজেলার সর্ব বৃহৎ বাণিজ্যিক মোকাম কপিলমুনি বাজারটি পরিকল্পনাহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে আজ ধবংসের দ্বার প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। বাজার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নির্মিত টিন সেড বিশিষ্ট চাঁদনীগুলো বর্তমানে অবৈধ ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে। আর যে উদ্দ্যশে ও পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। সে সব পরিকল্পনা আজ ভেস্তে গেছে। ফলে বহিরাগত ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঁচামাল বিক্রয় ও ক্রয়ের জন্য এসে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাদের। কপিলেশ্বরী মুনির নামানুসারে কপিল থেকে কপিলমুনি নাম করণ করা হয়। নদ-নদী ঘেরা, স্বচ্ছ সলিলা চির স্মৃতি বিজড়িত মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মাতৃসম কপোতাক্ষ বিধৌত কপিলেশ্বরী মুনির সাধনাস্থল, জাগ্রত পীর হযরত জাফর আউলিয়ার পদচারণায় ধন্য রায় সাহেবের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল“বিনোদগঞ্জ”। যা বর্তমানে কপিলমুনি বাজার নামে পরিচিত। কপিলমুনির আধুনিক রুপকার স্বর্গীয় রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু’র একান্ত চেষ্টা ও অকৃত্রিম ভালবাসা দিয়ে অতি সুনিপুন ভাবে বাংলা ১৩৩৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন এই বাজারটি। তাই তারই নামানুসারে নামকরণ হয় বিনোদগঞ্জ। ঐতিহ্যবাহী কপিলমুনি বাজারটি রক্ষায় অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি সাথে সাথে বাজারের উন্নয়নসহ জনগণের সেবা নিশ্চিত করার।