ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫

১০ পৌষ ১৪৩২, ০৪ রজব ১৪৪৭

সরকারি মেডিকেলে চান্স পেলেও টানাপোড়েনে তাপস্বীর ভর্তি অনিশ্চিত

শাহরিয়ার মিল্টন,শেরপুর

প্রকাশ: ০১:০০, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫

সরকারি মেডিকেলে চান্স পেলেও টানাপোড়েনে তাপস্বীর ভর্তি অনিশ্চিত

ছবি -বাংলার চোখ

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রাজনগর (সাইনবোর্ড) গ্রামের মেয়ে টি. এম. তাসনিম তাপস্বী সরকারি মেডিকেলে চান্স পেয়েও অর্থাভাবে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। দারিদ্র্যের কারণে মেডিকেল শিক্ষার খরচ বহন করা পরিবারের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে । ফলে মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পরও একজন সম্ভাবনাময় চিকিৎসকের স্বপ্ন থমকে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিবারের প্রত্যাশা, প্রশাসন ও সমাজের সহানুভূতিশীল মানুষদের সহযোগিতা পেলে তাপস্বীর মতো মেধাবী শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে একজন দক্ষ ও মানবিক চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে পারবেন।

অদম্য মেধা ও কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তাপস্বী ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ৩৬৯২ তম স্থান অর্জন করে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, কিশোরগঞ্জে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছেন । ভর্তি ও পড়াশোনার প্রাথমিক খরচ জোগাড় করাই এখন পরিবারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তাপস্বীর বাবা মো. মোশরাফুল ইসলাম একজন অবসরপ্রাপ্ত এনজিও কর্মী । সংসারের খরচ চালাতে বর্তমানে তিনি টিউশনি করান। মা মৌতিয়া খানম আফরোজা সেলাইয়ের কাজ করে পরিবারের আয়ের ক্ষুদ্র উৎস তৈরি করছেন। দুই সন্তানবিশিষ্ট পরিবারে তাপস্বী বড়।

তাপস্বীর বাবা মোশরাফুল ইসলাম বলেন, 'মেয়েটা ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী ওর পড়ালেখার জন্য আমরা সব কষ্ট সহ্য করেছি । এখন সরকারি মেডিকেলে চান্স পেয়েও যদি শুধু টাকার অভাবে ভর্তি করাতে না পারি-এটা একজন বাবার জন্য সবচেয়ে বড় কষ্টের বিষয় হবে।' তিনি আরও বলেন, 'আমি এখন টিউশনি করে সংসার চালাই, আর আমার স্ত্রী সেলাইয়ের কাজ করেন মেডিকেলে ভর্তি ও পরবর্তীতে পড়াশোনার খরচ আমাদের সাধ্যের বাইরে তবু আশা ছাড়ছি না-মানুষ যদি পাশে দাঁড়ায়, মেয়েটার স্বপ্ন পূরণ হবে।'

তাপস্বীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, মেধাবী শিক্ষার্থী তাপস্বীর শিক্ষাজীবনের সাফল্য ছিল ধারাবাহিক । পিতার চাকরির সুবাদে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলায় অবস্থানকালে ‘দ্যা নিউ ব্লগার কিন্ডারগার্টেন’-এর শিশু শ্রেণীতে পড়াশোনার সময় বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি অর্জন করেন ২০১৭ সালে কিশোরগঞ্জের জঙ্গলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ হন ।এরপর ২০২৩ সালে শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ ও চলতি বছরে শেরপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করে উত্তীর্ণ হন তাপস্বী। ধারাবাহিক এই সাফল্যের পথ ধরে ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ও ডেন্টাল মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধাতালিকায় স্থান করে নেন তিনি।

নিজের অনুভূতির কথা জানিয়ে তাপস্বী বলেন, 'কলেজে যাওয়া-আসার বাইরে সময় পেলেই বইয়ের সঙ্গে থেকেছি চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করাই আমার স্বপ্ন আমার সাফল্যের পিছনে বড় ভূমিকা পালন করেছেন আমার বাবা-মা আমাকে তারা সর্বোচ্চ সাপোর্ট দিয়েছেন।'
তাপস্বী তাসনিমের গল্প শুধু সাফল্যের নয়-এটি সংগ্রাম, সহনশীলতা ও সম্ভাবনার গল্প এখন প্রয়োজন সহমর্মিতার হাত, যাতে অর্থের অভাবে একটি স্বপ্ন থেমে না যায়
 

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন