ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫

১০ পৌষ ১৪৩২, ০৪ রজব ১৪৪৭

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: নিরাপত্তা থাকছে কয় স্তরে

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৩:১৪, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: নিরাপত্তা থাকছে কয় স্তরে

ছবি :সংগৃহীত

দীর্ঘ ১৭ বছর পর বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া তারেক রহমানের জন্য দলের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে রাজধানীতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘তারেক রহমানের দেশে নিরাপদ আগমন নিশ্চিত করার জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সম্পূর্ণ সতর্ক ও সমন্বিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়ে বাসসের সঙ্গে আলাপকালে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. বাহারুল আলম বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তার সুরক্ষায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পোশাকে ও সাদাপোশাকে মোতায়েন থাকবেন। এছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, দেশে ফেরার পর তারেক রহমান যাতায়াতের সময় পাবেন পুলিশি পাহারাসহ বিশেষ নিরাপত্তা। এছাড়া তার বাসভবন ও অফিসে থাকবে নিরাপত্তা। উর্দিধারীদের পাশাপাশি সাদাপোশাকে গোয়েন্দারা তারেক রহমানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান বিমানবন্দর থেকে গুলশানে আসার পথে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবেন। এছাড়া নিরাপত্তায় মাঠে থাকবেন ঢাকা মহানগর পুলিশের সোয়াট টিমের সদস্যরা।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন ঢাকা মহানগরজুড়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানা গেছে, তারেক রহমান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখার পর তাকে বহনকারী গাড়ির আগে-পিছে পুলিশ প্রটেকশন দেবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও ছদ্মবেশে গোয়েন্দারা তারেক রহমানের নিরাপত্তার দিকটি দেখভাল করবেন।

জানা যায়, তারেক রহমান বিমানবন্দর থেকে গুলশানে আসার পথে কয়েক হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওইদিন তার নিরাপত্তা উপলক্ষে মাঠে থাকবে ঢাকা মহানগর পুলিশের সোয়াট টিম, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা। তার বাসা ও অফিস ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে পুলিশ।

তারেক রহমান দেশে ফেরার পর সরাসরি হাসপাতালে যাবেন। এ কারণে এই রুট ঘিরে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া রয়েছে।

এছাড়া দলের পক্ষ থেকেও তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার নেতৃত্বে চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সসহ একাধিক টিম কাজ করবে। বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসা পর্যন্ত তারেক রহমানকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা দিতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে তার জন্য বাসভবন ও দলীয় অফিস প্রস্তুত করেছে বিএনপি। গুলশান অ্যাভিনিউর ১৯৬ নম্বর বাসায় উঠবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই বাসার পাশেই ভাড়া করা বাসা ফিরোজায় থাকেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। একই সঙ্গে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তারেক রহমানের জন্য আলাদা চেম্বার তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কের ১০/সি বাড়িটি ভাড়া নেওয়া হয়েছে বিএনপির অফিস হিসেবে। যেখান থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

চারতলা এই ভবনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে দোতলায় রয়েছে ব্রিফিং রুম। অন্য তলায় বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে গবেষণা সেল। এই বাড়ি ছাড়াও গুলশান অ্যাভিনিউর ১৯৬ নম্বর বাসাটিতে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলবে পুলিশ। সিসি ক্যামেরায় মোড়ানো থাকবে পুরো বাড়ি। অননুমোদিত কাউকে এই বাড়ির আশপাশে ভিড়তে দেওয়া হবে না।

দীর্ঘ ১৭ বছর পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান। দেশে ফেরার পর প্রথম তিন দিন বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।

বুধবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে করে তারেক রহমানের তিন দিনের কর্মসূচির কথা জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

তিনি বলেন, আগামীকাল দুপুরে বিমানবন্দরে নামার পর দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা তারেক রহমানকে স্বাগত জানাবেন। এরপর তিনি জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে তথা ৩০০ ফিট রাস্তায় সংবর্ধনাস্থলে যাবেন। সেখানে অপেক্ষায় থাকা নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন তিনি। এরপর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন। সেখান থেকে বিমানবন্দর সড়ক হয়ে কাকলীর মোড় হয়ে গুলশান–২ নম্বরে বাসভবনে চলে আসবেন। সেদিন আর অন্য কোনো অনুষ্ঠান হবে না।

 পরদিন ২৬ ডিসেম্বর, শুক্রবার জুমার নামাজের পর তারেক রহমান বাসভবন থেকে প্রথমে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন। সেখান থেকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর ২৭ ডিসেম্বর, শনিবারও দুটি কর্মসূচি রয়েছে। ওই দিন জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজ করবেন তিনি। এ জন্য তারেক রহমান সশরীর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন অফিসে যাবেন কি না, সেটা পরে জানানো হবে। ওই দিনই ভোটার হতে সব কাজ করবেন। এরপর শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাবেন।

উৎস: বাসস

আরও পড়ুন