Banglar Chokh | বাংলার চোখ

বছরে ৩ কোটি টাকার গোলের গুড় বিক্রি :বিপণন ব্যবস্থার জন্য ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না উৎপাদনকারীরা 

কর্পোরেট

উত্তম কুমার হাওলাদার কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:২৪, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩

সর্বশেষ

বছরে ৩ কোটি টাকার গোলের গুড় বিক্রি :বিপণন ব্যবস্থার জন্য ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না উৎপাদনকারীরা 

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গোল গাছের ডগা থেকে বেড়িয়ে আসা সু-মিষ্ট রস দিয়ে তৈরি করছে গুড় (মিঠা)। আর সেই সুস্বাদু গুড় বিক্রি হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে। উৎপাদনকারীরা বড় কোন প্লাস্টিকের বালতি কিংবা সিলভারের পাতিলে করে গোলের গুড় বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে আসেন। সারিবদ্ধ প্রতিটি পাত্রে ভর্তি রয়েছে সোনালি, হালকা লাল, চকচকে ও উজ্জ্বল সাদাটে সুস্বাদু গুড়। এসব দেখে ক্রেতারা দর-দাম করছেন। এ গুড়ে কোনো ক্ষতি না থাকায় চাহিদাও রয়েছে অনেক। তবে সুষ্ঠ বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে গুড় প্রস্তুতকারীরা বলেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে কম-বেশি গোল গাছ রয়েছে। এটি প্রকৃতি নির্ভর পাম জাতীয় উদ্ভিদ। নোনা জলে এর জন্ম, নোনা সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ।অথচ এর ডগা থেকে বেড়িয়ে আসছে সু-মিষ্ট রস। উপজেলার নীলগঞ্জ,চাকামইয়া ও মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি গোল গাছের বাগান রয়েছে। সাধারনত শীত মৌসুমে গোলগাছ থেকে রস পাওয়া যায়। এ রস খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি গুড় তৈরি করে পিঠে-পায়েস খেতেও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। বছরের চার মাস গোলের গুড় বিক্রি করে বাড়তি আয় করে থাকেন গোল গাছের মালিকরা। এ উপজেলায় প্রায় ৩০০ পরিবার গোলের গুড় উৎপাদনের সাথে জড়িত রয়েছে। এ থেকে বছরে প্রায় ৩ কোটি টাকার গুড় তৈরি হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এদিকে জলবায়ুর প্রভাবজনিত কারণসহ প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ ও চাষাবাদের অভাবে এ গাছ ক্রমশই ধ্বংস হতে বসেছে বলে দাবি পরিবেশবীদদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পৌর শহরের লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকায় সাপ্তাহিক মঙ্গলবার এ গুড়ের হাট বসে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে হরদমে চলে গোলের গুর বেচা-কেনা। বাজারে এ গুড় আনেক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। প্রাতি সাপ্তাহে এ হাটে ৬০০ থেকে ৭০০ কেজি গোলের গুড় বিক্রি হয় বলে বাজরের ইজারাদার বাইজিৎ শিকদার জানিয়েছেন। 
গুড় উৎপাদনকারী পরিমল হাওলাদার জানান, গত বছরের চেয়ে তার বাগানে এ বছর ফলন ভাল হয়েছে। তিনি ৩০০ গোল গাছের ছড়া থেকে প্রতিদিন ৮ কলস রস সংগ্রহ করতে পারেন। তা থেকে দৈনিক ২৫ কেজি গুড় তৈরি হয়। একই এলাকার নিঠুর হাওলাদার বলেন, তার বাগানে ৩৫০টি গোল গাছ থেকে গড়ে দৈনিক ১০ কলস রস সংগ্রহ করেন। এতে ৩০ কেজিরও বেশি গুড় তৈরি হয়। এ গুড় তিনি কলাপাড়ার সাপ্তাহিক বাজারে বিক্রি করেন। এছাড়া কিছু কিছু ক্রেতারা তার বাড়ি থেকেও গুড় কিনে নেন। অপর এক গুড় উৎপাদনকারী মনোজ শিকারি বলেন, তার বাগানের ৩০০ গোলের ছড়া কেটেছেন। প্রতিদিন সূর্য ওঠার সাথে সাথে তিনি কলস নিয়ে বাগানে বেড়িয়ে পড়েন। এরপর প্রতিটি গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। এভাবেই প্রতিদিন দুই দফা রস সংগ্রহ ও ছড়া কাটতে হয় তার। চৈত্র মাস পর্যন্ত চলবে এ কর্মযজ্ঞ এমন কথাই বলেছেন তিনি।
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামের বাসিন্দা শশধর হাওলাদার জানান, গোল গাছ থেকে শুধু রসই পাওয়া যায় না, গোল গাছের পাতা দিয়ে ঘরের ছাউনি ও জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। তবে এই এলাকায় গোলের বাগান ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। কারণ অনেকেই গোল গাছ ধ্বংস করে তা কৃষি জমিতে পরিণত করে ধান আবাদ করছেন।
বন বিভাগের কলাপাড়া সহকারী রেঞ্জ মো. মঞ্জুর কাদের বলেন, বনবিভাগের উদ্যোগে এ উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে গোলগাছের বীজ রোপণ করা হয়েছে। এ বছর আরও গোল গাছের বাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।  
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, গোলের গুড় যেন সঠিকভাবে বাজারজাত করে প্রস্তুতকারকরা সঠিক মূল্য পায় সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়