ঢাকা, রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

পার্বত্য চুক্তির ২৮ বছরেও কাঙ্খিত শান্তি ফেরেনি পাহাড়ে   

আলমগীর মানিক,রাঙামাটি

প্রকাশ: ০০:২৭, ২ ডিসেম্বর ২০২৫

পার্বত্য চুক্তির ২৮ বছরেও কাঙ্খিত শান্তি ফেরেনি পাহাড়ে   

ছবি :সংগৃহীত

আজ ২রা ডিসেম্বর। সংঘাত-সশস্ত্র তৎপরতা নিরসন করে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের এই দিনে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আজ ২৮ বছর পূর্ণ হলেও কাঙ্খিত শান্তি ফেরেনি পাহাড়ে। বরং চুক্তির পরবর্তী সময়ে নতুন নতুন আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনের উত্থানে আরও জটিল হয়েছে তিন পার্বত্য জেলার নিরাপত্তা পরিস্থিতি। আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, গুম, খুন ও পারস্পরিক সংঘাতে এখনও উত্তাল তিন পার্বত্য জেলা। হানাহানি আর ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে পার্বত্য অঞ্চল এখনো অশান্ত।

সরকারি একাধিক সূত্রে জানাগেছে; গত ২৮ বছরে পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন সশস্ত্র হামলায় নিহত হয়েছে ১,৪২৬ মানুষ এবং অপহরণের শিকার হয়েছে ২,৪৯৭ জন। এছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে আছেন সেনাবাহিনীর ১৭১, বিজিবির ১১০, পুলিশের ৩৮০ এবং আনসারের ১৬ সদস্য।

পার্বত্য চট্টগ্রামে ৭৫ পরবর্তী প্রায় দুই দশকের সংঘাত বন্ধে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকায় সরকার আর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। যা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি নামে অবহিত।

সরকারের পক্ষে জাতীয় সংসদের তৎকালীন চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও উপজাতীয়দের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমা এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তির দুইমাস পরে খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে অস্ত্র সমর্পণ করেছিল শান্তিবাহিনীর সদস্যরা। এর পর পার্বত্য এই চুক্তির ২৮ বছর পরও পাহাড়ে এখনো এই চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে টানাপোড়েন লেগেই আছে। পাহাড়ি-বাঙ্গালীদের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। পক্ষে বিপক্ষে বিভেদ তৈরী হওয়ায় পার্বত্য শান্তি চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে থমকে দিয়েছে। তাই পার্বত্য শান্তিচুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নে পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠিকে নিয়ে পূর্ণমূল্যায়ন করা দরকার।

এদিকে, পার্বত্য চুক্তির পরবর্তী দুই যুগে পাহাড়ে একে একে উত্থিত হয়েছে ৬টি সশস্ত্র সংগঠন। জেএসএস (সন্তু); জেএসএস সংস্কার (এমএন লারমা); ইউপিডিএফ (প্রসীত); ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক); মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি); ও কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এই ছয়টি সংগঠন। এদের পারস্পরিক বিরোধ, আধিপত্য বিস্তার ও সশস্ত্র অনুশীলনের কারণে পাহাড়ের সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন নানাভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। মাঝেমধ্যে এসব সংঘাত পাহাড়ের সম্পত্তি, যোগাযোগব্যবস্থা ও উন্নয়ন প্রকল্পেও বাধা সৃষ্টি করছে। শান্তির পথ আটকে আছে অবৈধ অস্ত্র, চাঁদাবাজি ও দলীয় সংঘাতের কারণে।

স্থানীয়দের দাবি; অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ এবং সব পক্ষকে আলোচনার টেবিলে আনতে সরকারের আরও কঠোর ও কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন।

এদিকে চুক্তি বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে স্থানীয় নাগরিক পরিষদের নেতৃবৃন্দ। তারা জানান, পার্বত্য চুক্তিতে স্থানীয় সকল জনগোষ্টির স্বার্থ নিশ্চিত করা হয়নি; এছাড়া একজন পতিত স্বৈরাচারের হাতে এই চুক্তি হয়েছিলো। সেই স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এখন পালিয়েছে তার সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং বাতিল করা হয়েছে। তাই সকল জনগোষ্টির অধিকার খর্বকারি পার্বত্য চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মুজিব।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য হাবিব আজম জানিয়েছেন, পাহাড়ি-বাঙ্গালীসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্টির সকলের সাথে আলোচনা করে পার্বত্য চুক্তির পুর্নমূল্যায়ন খুবই জরুরী। কেউই যাতে বৈষম্যের শিকার না হয়। তাহলেই শান্তি সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি।

পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে ১৯৯৭ সালে যে প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ হয়নি এখনো। তাই পার্বত্য চুক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নের বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকার এগিয়ে আসবে এমনটা প্রত্যাশা জনসংহতি সমিতির।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ সভাপতি সাবেক এমপি উষাতন তালুকদার বলেন, পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের পর ৫টি রাজনৈতিক সরকার ও ২টি তত্বাবধায়ক সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ট থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে কোনো সরকারই রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসেনি। তাই ২৮ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আপামর জনসাধারণ তথা বর্তমান সরকার ও আগামীতে নির্বাচিত সরকারকে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করতে উদার মন নিয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন তিনি।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন