আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭:২৫, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবি :সংগৃহীত
ভারতে বড়দিনের উৎসবে নজিরবিহীন তাণ্ডব চালিয়েছে উগ্রপন্থি হিন্দুত্ববাদী গ্রুপগুলো। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে অনুষ্ঠানস্থলে, ভাঙচুর করা হয়েছে সান্তা ক্লজের মূর্তিও। এমনকি নারী ও শিশুরাও আক্রান্ত হয়েছেন এসব হামলায়।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) দ্য হিন্দুসহ একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এসব তথ্য।
ঘটনাগুলোর একাধিক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, উগ্র স্লোগান দিয়ে বড়দিনের সাজসজ্জা, মঞ্চ ও অন্যান্য সরঞ্জাম ভাঙচুর করছে উত্তেজিত মব। এ সময় শপিংমলের ভেতরে ঢুকেও তাণ্ডব চালায় তারা।
অভিযোগ উঠেছে, কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও বজরং দল, আরএসএসের মতো কট্টরপন্থা দলগুলোর হাত রয়েছে এসব হামলার পেছনে।
অধিকাংশ হামলা চালানো হয়েছে মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, আসাম, হরিয়ানার মতো বিজেপি–শাসিত রাজ্যে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার জন্ম দিয়েছে মধ্য প্রদেশের জাবালপুরের একটি হামলার ঘটনা, যেখানে বড়দিনের উৎসবে যোগ দেওয়া এক দৃষ্টিশক্তিহীন খ্রিস্টান নারীকে হেনস্তা ও মারধর করতে দেখা যায় ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির স্থানীয় নেত্রী আঞ্জু ভারঘাভাকে। ঘটনাটির ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেলে জনসাধারণের মধ্যে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিরোধী দল কংগ্রেস এটিকে বলছে ‘বর্বরতা ও নির্মমতার উদাহরণ।’ চারিদিকে সমালোচনার পর স্থানীয় বিজেপি ভারঘাভাকে শোকজ নোটিশ দিয়েছে। ভারঘাভা অবশ্য কোনো ভুল করেননি বলে দাবি করেছেন। আর পুলিশ বলছে, এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি কেউ।
আসামের নলবাড়িতে আরেকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে একটি খ্রিষ্টান মিশনারি স্কুলে। সেখানে তাণ্ডব চালায় বজরঙ্গ দল। প্রধানত এই সংগঠন ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) বিভিন্ন রাজ্যে বড়দিন উদ্যাপনের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নেয়। আসামের নলবাড়ি জেলার পানিগাঁওয়ে সেন্ট মেরি ইংলিশ স্কুলে ঢুকে বজরঙ্গ দলের সমর্থকেরা এ তাণ্ডব চালান। বড়দিন উপলক্ষে স্কুলটি সাজানো হয়েছিল। ক্রিসমাস ট্রি লাগানো হয়েছিল। সব খুলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। স্কুলের কাছেই এক দোকানে ক্রিসমাস উপলক্ষে বিক্রির জন্য রাখা সামগ্রীও তছনছ করা হয়।
ওড়িশা ও দিল্লির আরও দুটি ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, কোথাও সান্তা ক্লজের ক্যাপ বিক্রি করা ব্যক্তিদের হেনস্তা করছেন একদল উগ্র হিন্দুত্ববাদী যুবক, কোথাও বড়দিনের সাজে ব্যস্ত থাকা নারীদের হেনস্তা করা হচ্ছে। দুই ক্ষেত্রেই বড়দিন উদযাপনকারীদের ওপর ‘হিন্দু দেশে’ খ্রিস্টান ধর্মের প্রচারণার অভিযোগ তুলেছে উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদীরা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন আগ্রাসন চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদী মব তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে অভিযোগ উঠেছে।
একই ধরনের ঘটনা ঘটে ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর, ভারতের বিজেপি–শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে। জয়পুর, বিদিশা, ভোপাল, গুয়াহাটি, বেরিলি, ইন্দোরের মতো শহর ছাড়াও আম আদমি পার্টি–শাসিত পাঞ্জাব ও বাম–শাসিত কেরালার বিভিন্ন শহরে বিপণিবিতান, স্কুল, দোকান, এমনকি উৎসবমুখর মানুষদের ওপরেও হামলা চালায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরঙ্গ দল।
অন্যদিকে কেরালায় পালাক্কড় জেলায় পুদুচেরি গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্যারল গাওয়া বন্ধ করে দেন আরএসএসের সদস্যেরা। বিজেপি–শাসিত উত্তরাখন্ডের হরিদ্বারে গঙ্গার ধারে রাজ্য পর্যটন দপ্তর পরিচালিত এক হোটেলেও বড়দিনের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বড়দিনের উৎসব ঘিরে ভারত জুড়ে উগ্রপন্থি হিন্দুদের চালানো এসব তাণ্ডবে খ্রিস্টধর্মীয় সংগঠনগুলোর পাশাপাশি গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। ক্যাথলিক বিশপস’ কনফারেন্স এ ক্ষেত্রে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আইনি কড়াকড়ি আরোপ এবং খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা বিধানের আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটি বলেছে, উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদীদের এসব কর্মকাণ্ড স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করছে।
নির্যাতিত খ্রিস্টানদের পাশে থাকার লক্ষ্যে সৃষ্ট অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘ওপেন ডোরস’ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শুধু বড়দিনের সময়েই ভারতজুড়ে খ্রিস্টানদের ওপর ৬০টিরও বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া, খ্রিস্টানসহ সংখ্যালঘুদের আইনি অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ইউনাইটেড ক্রিশ্চিয়ান ফোরাম এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারতে খ্রিস্টানদের ওপর অন্তত ৬০০টি হামলা হয়েছে এ বছর।
সূত্র: দ্য হিন্দু