আলমগীর মানিক,রাঙামাটি থেকে
প্রকাশ: ০১:৩৩, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবি -বাংলার চোখ
পার্বত্য চট্টগ্রামের জটিল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বহুমাত্রিক সংকটের কারণে এ অঞ্চলের চলমান সমস্যা আর কেবল আঞ্চলিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখন জাতীয় সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, একাধিক প্রতিবেশী দেশের সংশ্লিষ্ট্যতায় এই পার্বত্য অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেভাবে বিকশিত হচ্ছে সেই লক্ষ্যে পার্বত্যাঞ্চলের নিরাপত্তা ও অখন্ডতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গুরুত্বপূর্ন হয়ে আসছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের এমন একটি পরিস্থিতি বিরাজ করছে যার জন্য জাতীয় সমাধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন এবং প্রয়োজনীয় হয়ে দাড়িয়েছে। এই সমাধানের মূলে হলো এই অঞ্চলের যে মানুষরা আছেন জাতি-ধর্ম সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সকলের অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে এবং ইতিহাসের প্রতি সন্মান দেখিয়ে এবং স্থানীয় বৈশিষ্ট্যের প্রতি মনোযোগি থেকে একটি সমাধানের পথরেখা বের করতে হবে।
এই জাতীয় সমাধানের পথরেখা নির্বাচনী ইশতেহারের ভেতরে রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এবং আগামীদিনের বাংলাদেশের জন্য এটা কিভাবে কার্যকর করবেন এটা পরিস্কারভাবে জানতে চেয়েছেন স্থানীয় স্টেকহোল্ডাররা। নাগরিক প্লাটফর্ম এর প্রাক নির্বাচনী উদ্যোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাঙামাটিতে আয়োজিত আঞ্চলিক পরামর্শ সভা শেষে সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফ করার সময় সন্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আজকের আলোচনায় প্রাণখুলে অত্রাঞ্চলের স্টেকহোল্ডাররা তাদের নিজস্ব ভাবনার কথা; এলাকায় স্থিতিশীল পরিস্থিতির লক্ষ্যে প্রদান করা বক্তব্যগুলো থেকে এসব কথা উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, পাহাড়ের সমস্যা নিরসনে পথরেখা সৃষ্টি করতে হবে যার মধ্যে ভূমি সংস্কারের বিষয়, স্থানীয় সরকার সংস্কার, বিভিন্ন ধর্মীয় জাতিস্বত্তাগুলোর পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের মাধ্যমে স্বার্থ রক্ষা করা; অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা থেকে শুরু করে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন; কাপ্তাই হ্রদের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ, স্থানীয়দের জন্য শিল্পস্থাপন, স্থানীয়দের নিয়ে ইকো সিস্টেম পর্যটন সস্প্রসারণসহ সংশ্লিষ্ট্য সকল সম্প্রদায়ের অংশীদারিত্ব নিশ্চিতমূলক সমাজ ব্যবস্থা নিশ্চিতের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে থাকতে হবে।
অংশগ্রহণকারিদের নানান বক্তব্যের সারমর্ম তুলে ধরে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা থেকে শুরু করে পাশ^বর্তী দেশগুলোর ভূরাজনৈতিক সমস্যার কারনে পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান সমস্যা এখন আর আঞ্চলিক সমস্যা নয়! তাই পাহাড়ের সার্বিক পরিস্তিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে জাতীয় সংহতি হিসেবে রাজনৈতিকদলগুলোকে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সংযুক্ত করতে হবে।
চলমান সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার আলোচনায় ও বিতর্কে পিছিয়ে পড়া বা সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠির স্বার্থ ও প্রত্যাশা তুলে ধরতে এবং তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নাগরিক প্লাটফর্ম একটি নাগরিক ইশতেহার প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছে। যার লক্ষ্য হলো নাগরিক প্লাটফর্ম একটি ন্যায্য, সমতাভিত্তিক ও জবাবদিহিপূর্ন বাংলাদেশ বিনির্মানে সহায়ক হিসেবে মতামত সংগ্রহ করছে।
এদিকে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ এখন একটা দোলাচলার মধ্যে আছে। একদিকে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে আমরা যে পরিবর্তনগুলো চেয়েছি সেই পরিবর্তনগুলোকে টেকশই করার ক্ষেত্রে একটি গণতান্ত্রিক উত্তরনের যে প্রয়োজনীয়তা; সেই প্রক্রিয়ার ভেতরে আমরা ঢুকছি। তবে তফসিল ঘোষনার মাধ্যমে আমরা অনিবার্য পরিণতির দিকে এগিয়ে যাওয়াকে আরেকটি পদক্ষেপ হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।
অপরদিকে; ভীতিমুক্ত ভোটার. প্রভাবমুক্ত প্রশাসন এবং শক্ত আইন প্রয়োগকারি সংস্থা; এসবগুলোর দৃশ্যমান এখনো দেখা যাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন তিনি। এই দৃশ্যমান চিহ্ন আনার জন্য আগামী যে কয়েক সপ্তাহ সময় রয়েছে তারজন্য সরকার নির্বাচন কমিশন এবং সর্বোপরী সেনাবাহিনী আইনপ্রয়োগকারি সংস্থা তারা তাদের ভূমিকা পালন করবে সেলক্ষ্যে আস্থার সৃস্টি করতে বর্তমান সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সেটা যেমন আমরা আশাকরছি তেমনিভাবে রাজনৈতিক দলগুলো এক্ষেত্রে বড় খেলোয়ারের ভূমিকায় রয়েছে। প্রশাসন, রাজনৈতিকদলগুলো ও সরকার সকলে মিলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি কার্যকর পরিস্থিতি দৃশ্যমান করবে সেটাই আমরা প্রত্যাশা করছি। একারনেই আমরা নাগরিকদের ভূমিকার উপর জোর দিচ্ছি।
এরআগে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়। এতে রাঙামাটির চাকমা সার্কেল চীফ এর স্ত্রী ইয়ান ইয়ান, হেডম্যান-কার্বারী, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবর্গ; এনজিও ব্যক্তিত্ব; কলেজ বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষজন এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন।