ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৭:৫০, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবি :সংগৃহীত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৫ দিনের জন্য আইন শৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। নির্বাচনের আগে ও পরে মিলিয়ে মোট ৫ দিন ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নিয়োজিত থাকবে সশস্ত্র বাহিনী।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশন থেকে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিশেষ পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়, ‘আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ তারিখে বিষয়োক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও উৎসবমুখর করার পূর্বশর্ত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা। সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলো এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সশস্ত্র বাহিনী ইতোমধ্যে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় মোতায়েন রয়েছে, যা নির্বাচনের সময়ও অব্যাহত থাকবে। সরকার কর্তৃক সামরিক বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ তারিখ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, বাহিনী ও সংস্থার প্রধান/প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে কমিশনের সঙ্গে একাধিক মতবিনিময় করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত কমিশনের দিক নির্দেশনা প্রদান করা হলো।’
পরিপত্রে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় পরিবেশ, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য বেশকিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক রাখা। সব দল ও প্রার্থী যাতে নির্বিঘ্নে নিয়মানুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে- তা নিশ্চিত করা।
ভোটাররা যাতে নিঃশঙ্কচিত্তে ও স্বস্তির সঙ্গে ভোট দিতে পারেন- তা নিশ্চিত করা। ভোট কেন্দ্র ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রসহ সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ও অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নির্বাচনি সামগ্রী ও ব্যালটের (পোস্টাল ব্যালটসহ) নিরবচ্ছিন্ন পরিবহণ ও সংরক্ষণে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গুজব ও অপতথ্যের বিস্তার রোধ এবং প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করা। জাতি-ধর্ম-লিঙ্গ-গোত্র নির্বিশেষে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পঙ্গু, আহত, বয়স্ক, অসুস্থ ও সন্তানসম্ভবাদের জন্য চলাচল ও ভোটাধিকার প্রয়োগে সহনীয় সুযোগ ও পরিবেশ তৈরি করা। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে কেন্দ্র করে ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাঠে নিয়োজিত থাকবে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। নির্বাচনের আগে ৩ দিন এবং পরে একদিন মোতায়েন থাকবে।
এর আগে সারা দেশে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়গুলোতে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কার্যালয়গুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের নির্দেশও দিয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
নির্বাচন কমিশনের উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন সই করা এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, গত ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি জারি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়গুলোতে নির্বাচন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি, নির্বাচনি মালামাল, যন্ত্রপাতি সংরক্ষিত রয়েছে বলে ওই অফিসগুলোতে নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় ওই অফিসগুলোতে সংরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ নথি, নির্বাচনি মালামালের সুরক্ষাসহ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচরীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক বলে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, এ অবস্থায় রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের অফিসগুলোতে নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের নির্দেশনা দিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এর আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ মাঠ পর্যায়ের কার্যালয় এবং রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া তিন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা চেয়েছে ইসি।
এছাড়া, বর্তমানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য গাড়িসহ পুলিশি এসকর্ট থাকলেও নির্বাচনকালীন সময়ে আরও একটি গাড়িসহ অতিরিক্ত এসকর্ট চাওয়া হয়েছে। চার কমিশনার ও সিনিয়র সচিবের বাসভবন ও অফিসে যাতায়াতসহ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি একই দিনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের শেষ তারিখ ১১ জানুয়ারি আরও নিষ্পত্তি ১২ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি, রিটার্নিং কর্মকর্তা দ্বারা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ ২১ জানুয়ারি, নির্বাচনি প্রচার চলবে ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত।