আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২১:৪০, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
ফাইল ছবি
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদ দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও গভীরভাবে আলোচিত হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনীতির মাঠে চার দশকের বেশি সময় নেতৃত্ব দেওয়া এই রাজনীতিকের প্রয়াণকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হিসেবে তুলে ধরেছে বিশ্বের শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলো।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে তুলনামূলকভাবে নবীন অবস্থান থেকে কিভাবে খালেদা জিয়া রাজপথের রাজনীতি পেরিয়ে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠেন, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার দীর্ঘ ও তীব্র রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় তার ভূমিকা—এসব দিকই উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
রয়টার্স
লন্ডনভিত্তিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স শিরোনাম করেছে, ‘বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ৮০ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন’। প্রতিবেদনে তাকে বাংলাদেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
রয়টার্স লিখেছে, ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনার সঙ্গে দীর্ঘ ও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে কয়েক দশক ধরে তারা পর্যায়ক্রমে দেশের শাসনক্ষমতায় ছিলেন। প্রতিবেদনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা, কারাবাস এবং গৃহবন্দি অবস্থার কথাও তুলে ধরা হয়েছে।
বিবিসি
বিবিসির প্রতিবেদনে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত জীবন ও রাজনৈতিক উত্তরণের গল্প গুরুত্ব পেয়েছে। সংবাদমাধ্যমটির শিরোনাম, ‘খালেদা জিয়া: হত্যার শিকার নেতার বিধবা পত্নী, যিনি বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন’।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের আগে খালেদা জিয়া ছিলেন একজন লাজুক গৃহবধূ। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং পরে তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনীতির অন্যতম প্রভাবশালী নেত্রীতে পরিণত হন।
গার্ডিয়ান
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বর্ণনা করেছে। প্রতিবেদনের শিরোনাম, ‘শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন’।
আল জাজিরা
কাতারভিত্তিক আল জাজিরা শিরোনাম করেছে, ‘৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন খালেদা জিয়া, বাংলাদেশে শোক’।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টালমাটাল রাজনৈতিক বাস্তবতায় খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চরিত্র।
ওয়াশিংটন পোস্ট
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রাজনৈতিক সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছে। তাদের শিরোনাম, ‘বাংলাদেশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী, হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন’।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই দুই নেত্রীর দ্বন্দ্ব এক প্রজন্মের বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা গড়ে দিয়েছে।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস
‘বংশগত’ রাজনীতির প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়াকে উপস্থাপন করে নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। বংশগত বা পারিবারিকভাবে রাজনীতি চর্চা করে যাওয়া আরেক নারীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে গেছেন, যা তরুণ দক্ষিণ এশীয় দেশটির ভাগ্য বা ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণ করে দিয়েছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস শিরোনাম করেছে, ‘বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মারা গেছেন’।
ব্লুমবার্গ
নিউ ইয়র্কভিত্তিক ব্লুমবার্গ শিরোনাম করেছে, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রের কারিগর খালেদা জিয়া ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন’।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সামরিক শাসনের পর গণতন্ত্রে ফেরার প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন এবং কয়েক দশক ধরে দেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেছেন।
ডন
পাকিস্তানের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম ডন লিখেছে, ‘বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘ অসুস্থতার পর ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন’। প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দুর্নীতির মামলায় তার কারাবাস এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর মুক্তির প্রসঙ্গও উল্লেখ করা হয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া
প্রতিবেশী ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শোকবার্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছে। শিরোনাম, ‘খালেদা জিয়া আর নেই: প্রধানমন্ত্রী মোদী গভীর শোক, ২০১৫ সালের সাক্ষাতের ছবি শেয়ার করেছেন’।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার ভূমিকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে খালেদা জিয়ার মৃত্যু কেবল একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াণ নয় বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক যুগের অবসান হিসেবেই প্রতিফলিত হয়েছে।