আলমগীর মানিক,রাঙামাটি থেকে
প্রকাশ: ২৩:২৭, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
ফাইল ছবি
রাঙামাটিতে এক নারীকে ধর্ষণ করে সেই ঘটনার স্থিরচিত্র ও ভিডিও ধারণ, পরবর্তীতে সেগুলো দেখিয়ে দীর্ঘদিন মানসিক নির্যাতন ও অর্থ আদায়ের চেষ্টা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে স্বামী-স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
ঋণ নিতে গিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তার লালসার শিকার হওয়ার পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার এক পাহাড়ি নারী অবশেষে চক্রের হাত থেকে রক্ষায় আইনের দ্বারস্থ হয়েছেন।
রাঙামাটি কোতয়ালী থানা কর্তৃপক্ষ মামলার বিষয়টি প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন। থানার দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী চন্দনা (ছদ্মনাম) চাকমা (৪২) ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে কোতয়ালী থানায় হাজির হয়ে এজাহার দাখিল করেন।
এজাহারের তথ্যানুসারে, আর্থিক প্রয়োজনে সোনালী ব্যাংক রিজার্ভ বাজার শাখায় ঋণের জন্য গেলে ব্যাংক কর্মকর্তা প্রিন্সিপাল অফিসার নিক্সন চাকমা (৪০) এর সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
দ্রুত ঋণ অনুমোদনের আশ্বাস দিয়ে ৮ নভেম্বর ২০২৪ বিকাল আনুমানিক ৪টা ৩০ মিনিটে রাঙ্গামাটি শহরের একটি আবাসিক হোটেলের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করা হয় এবং ওই সময় স্থিরচিত্র ও ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে এসব ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে দীর্ঘদিন তাকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়।
প্রথম ঘটনার পর থেকে প্রায় ১৫/২০ দিন পরপর ‘জাঙ্গি’ নামক অ্যাপের মাধ্যমে ধারণকৃত ভিডিও ও ছবি পাঠিয়ে পুনরায় শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য চাপ দেওয়া হতো।
পরে ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ বিকাল আনুমানিক ৫টা ৪৫ মিনিটে নিক্সন চাকমার স্ত্রী অনুরাধা চাকমা (৩৭) ভুক্তভোগীর কাছে এসব ভিডিও ও ছবি আছে বলে এসএমএস পাঠান এবং প্রথমে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, পরে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন।
দাবি অনুযায়ী টাকা না দিলে আত্মীয়স্বজন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।
এজাহারে ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা না দেওয়ায় আসামিরা ফেসবুক মেসেঞ্জারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্ষণের ভিডিও ও স্থিরচিত্র ছড়িয়ে দেয়।
এ ঘটনায় ভিকটিম কর্তৃক লিখিত অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলা নং-১৫ (তারিখ ২৯/১২/২০২৫), জিআর নং–১৩৩ হিসেবে মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৯(১) ধারা এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ এর ৮(১)/৮(২)/৮(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন রাঙামাটির কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মো: জসিম উদ্দিন।
মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে এবং আসামীকে গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান চলমান রয়েছে বলেও জানিয়েছেন ওসি।
এদিকে ভিকটিমের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আসামী নিক্সন চাকমার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে কলদিলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেলেও হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ দিলে তিনি এই বিষয়ে নিউজ না করার অনুরোধ জানিয়ে“দাদা কথা বলার মতো অবস্থায় নেই” লিখে দেন।
অপরদিকে, সংশ্লিষ্ট্য সোনালী ব্যাংক রাঙামাটি শাখায় গিয়ে কর্তব্যরত ব্যাংক ম্যানেজার এর কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না এবং নিক্সন চৌধুরী অত্যন্ত ভালো এবং বিচক্ষণ প্রকৃতির।
এক প্রশ্নের জবাবে ম্যানেজার বলেন, নিক্সন চৌধুরী দুইদিনের ছুটি নিয়েছিলেন এবং সেটি সোমবার শেষ হয়ে গেছে। মঙ্গলবার তিনি সকালে পারিবারিক কারণ দেখিয়ে ছুটির জন্য একটি দরখাস্ত জমা দিয়েছেন।