স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪:২৮, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
সংগৃৃহীত
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে শততম টেস্টে নেমে ব্যাটে রাঙিয়েছেন, ইতিহাসের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে মাইলফলকের ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ফিফটি পেরোনো ইনিংস উপহার দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। বল হাতে রাঙিয়েছেন তাইজুল ইসলাম, দেশের সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেট শিকারি হওয়ার পাশাপাশি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২৫০ উইকেটের ক্লাবে পৌঁছেছেন। দুই অভিজ্ঞ তারকার স্মরণীয় ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ২১৭ রানে হারিয়ে দুই টেস্টের সিরিজে অতিথিদের হোয়াইটওয়াশের স্বাদ নিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন মুশফিকুর। ইতিহাসের ১১তম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্টে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন। দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত থাকেন ৫৩ রানে। তাতে রিকি পন্টিংয়ের পাশে নাম লেখান। দুজনই শততম টেস্টে দুই ইনিংসে পঞ্চাশের বেশি রান করেছেন। অজি সাবেক পন্টিং অবশ্য জোড়া সেঞ্চুরি করেছিলেন, মুশফিকের সেটির সুযোগ হয়নি চতুর্থ দিনে অধিনায়ক ইনিংস ঘোষণা করে দেয়ায়।
ব্যাটে মুশফিকের ইতিহাস গড়া ম্যাচে বোলিংয়ে আলো ছড়ান তাইজুল ইসলাম। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ২৫০ উইকেটের মাইলফলকে নাম লেখান। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেন। তাতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেট শিকারী সাকিব আল হাসানের রেকর্ডে ভাগ বসান। সাকিব ২৪৬ উইকেট নিয়ে এতদিন শীর্ষে ছিলেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে অ্যান্ডি বালবির্নেকে ফিরিয়ে সাকিবকে ছাড়িয়ে যান। শনিবার মিরপুর টেস্টের চতুর্থ দিনে আরও দুই উইকেট নেন তাইজুল। ২৪৯ টেস্ট উইকেট নিয়ে দিনের খেলা শেষ করেন।
ঞ্চম ও শেষ দিনে নিজের সপ্তম ওভারে মাইলফলকের উইকেটটি নেন তাইজুল। ম্যাকব্রিনেকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন টাইগার স্পিনার। ৫৭তম ম্যাচে নেমে টেস্ট ইতিহাসে ৫৩তম বোলার হিসেবে এই মাইলফলকে পৌঁছান তাইজুল। ষষ্ঠ বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে কীর্তি গড়লেন তাইজুল। তার আগে এই কীর্তিতে নাম লেখিয়েছেন বিষেন সিং বেদি (২৬৬), ডেরেক আন্ডারউড (২৯৭), রবীন্দ্র জাদেজা (৩৪৩), ড্যানিয়েল ভেট্টোরি (৩৬২) এবং রাঙ্গানা হেরাথ (৪৩৩)।
পাশাপাশি বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে কম টেস্টে ২৫০ উইকেট নেয়ার কীর্তিতে শ্রীলঙ্কার রাঙ্গানা হেরাথের সাথে নাম লেখালেন তাইজুল। দুজনেই ৫৭ টেস্টে এই মাইলফলকে পৌঁছান।
বুধবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে টসে জিতে আগে ব্যাটে নামে টিম টাইগার্স। প্রথম ইনিংসে ১৪১.১ ওভারে ৪৭৬ রানে থামে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। জবাবে নেমে শুক্রবার ম্যাচের তৃতীয় দিন দ্বিতীয় সেশনে গুটিয়ে যায় আইরিশরা। ৮৮.৩ ওভারে ২৬৫ রান করে তারা। দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে বাংলাদেশ ৬৯ ওভারে ৪ উইকেটে ২৯৭ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। আগের ২১১ রানসহ টাইগারদের মোট সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫০৮ রান। জবাবে নেমে ১১৩.৩ ওভারে আয়ারল্যান্ডের ইনিংস থামে ২৯১ রানে।
৫৪ ওভার ব্যাট করে ৬ উইকেটে ১৭৬ রানে রোববার শেষ দিনের খেলা শুরু করে আয়ারল্যান্ড। ১৪তম ওভারে দিনের প্রথম সাফল্য পায় টিম টাইগার্স। অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনেকে ফেরান তাইজুল। ১৮৯ রানে সপ্তম উইকেট হারায় দলটি। ২১ রান করেন। ২৩৭ রানে অষ্টম উইকেট তুলে নেন হাসান মেহেদী হাসান মিরাজ। ফেরেন ৩০ রান করা জর্ডান নেইল। নবম উইকেটে কার্টিস ক্যাম্ফের ও গ্যাভিন হোয়ে মিলে কাটিয়ে দেন ৩১.৫ ওভার। ৫৪ রান যোগ করেন দুজনে। ১১৩.২ ওভারে হোয়েকে ফেরান মুরাদ। ১০৪ বলে ৩৭ রান করেন। পরের বলেই ম্যাথিউ হামফ্রেয়ার্সকে বোল্ড করেন। বাংলাদেশর জয় নিশ্চিত করে ২১৭ রানে। ক্যাম্ফের অপরাজিত থাকেন ২৫৯ বলে ৭১ রানে।
শনিবার চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় সেশনে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটে নামে আইরিশরা। পাঁচ শতাধিক রানের লক্ষ্য নিয়ে ২৬ রানে দুই উইকেট হারায় । তাইজুলের শিকার হয়ে ফিরে যান দুই ওপেনার অ্যান্ডি বালবির্নে (১৩) এবং পল স্টার্লিং (৯)। তৃতীয় উইকেট ৫১ রান যোগ করেন কেড কারমাইকেল ও হ্যারি টেক্টর। ৭৭ রানে জুটি ভাঙে। কারমাইকেল ফেরেন ১৯ রান করে।
১১৮ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় দলটি। হ্যারি টেক্টরকে ফেরেন ৮০ বলে ৫০ রানে। ১২৭ রানে লোরকান টাকার ফেরেন ৭ রান করে। ১৬৩ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় সফরকারীরা। স্টেফেন দোহেনি ফেরনে ১৫ রানে। পরে কার্টিস ক্যাম্ফের ও অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনে দিনের খেলা শেষ করেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে তাইজুল ও হাসান মুরাদ ৪টি করে উইকেট নেন। খালেদ আহমেদ ও মেহেদেী হাসান মিরাজ নেন একটি করে উইকেট।
বুধবার প্রথমদিনে ব্যাটে নেমে বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিনের প্রথম দুই সেশন পর্যন্ত ব্যাট করে। সেঞ্চুরি করেন শততম টেস্টে নামা মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। ৯০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ২৯২ রানে প্রথমদিন শেষ করা স্বাগতিকরা দ্বিতীয় দিনে ব্যাট করে আরও ৫১.১ ওভার। যোগ করে ১৮৪ রান।
শততম টেস্টে নেমে সেঞ্চুরির অনন্য কীর্তিতে নাম লেখান মুশফিক। ইতিহাসের ১১তম ক্রিকেটার হিসেবে মাইলফলক গড়েন। সঙ্গে বাংলাদেশ জার্সিতে টেস্টে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ডে মুমিনুল হকের সঙ্গে ভাগ বসান। দুজনেই ১৩টি করে সেঞ্চুরি করেছেন। ৫ চারে ২১৪ বলে ১০৬ রান করে ফেরেন মুশফিক।
ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন দাস। ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ১৯২ বলে ১২৮ রান করে ফিরেছেন। প্রথম ইনিংসে ফিফটি পেয়েছেন মুমিনুল হক। ১২৮ বলে ৬৩ রান করেছেন। মেহেদী হাসান মিরাজ ৪৭, সাদমান ইসলাম ৩৫ এবং মাহমুদুল হাসান জয় ৩৪ রান করেছেন।
প্রথম ইনিংসে আইরিশ স্পিনার আন্ডি ম্যাকব্রিনে ৬ উইকেট নেন। ম্যাথিউ হামফ্রেয়াস ও গ্যাভিন হোয়ে নেন দুটি করে উইকেট।
জবাবে নেমে ২৬৫ রানে থামে আইরিশদের প্রথম ইনিংস। সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন লোরকান টাকার। ১৭১ বলে ৭৫ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ৪৯ রান করেন জর্ডান নেইল। ৪৬ রান করেন স্টেফেন দোহেনি। ২৭ রান করেন পল স্টার্লিং, ২১ রান আসে অ্যান্ডি বালবির্নের ব্যাট থেকে।
প্রথম ইনিংসে তাইজুল ইসলাম ৪ উইকেট নেন। খালেদ আহমেদ ও হাসান মুরাদ নেন ২টি করে উইকেট। মেহেদী হাসান মিরাজ ও ইবাদত হোসেন নেন একটি করে উইকেট।
২১১ রানে এগিয়ে শুক্রবার তৃতীয় দিন দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে ভালো শুরু পায় বাংলাদেশ। উদ্বোধনীতে ১১৯ রানের জুটি গড়েন মাহমুদুল হাসান জয় ও সাদমান ইসলাম। ফিফটি করেন দুই ওপেনারই। ৩১.১ ওভারে পঞ্চম টেস্ট ফিফটি করে মাহমুদুল আউট হলে জুটি ভাঙে। ৬ চারে ৯১ বলে ৬০ রান করে যান। পরে মুমিনুলকে নিয়ে দিনের খেলা শেষ করেন সাদমান।
শনিবার সকালে ৩৭ ওভারে ১ উইকেটে ১৫৬ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করেন সাদমান ইসলাম ও মুমিনুল হক। দিনের চতুর্থ ওভারে উইকেট হারায় লাল-সবুজের দল। সাদমান ফিরে যান ১১৯ বলে ৭৮ রান করে। এরপর শান্তও ফিরে যান দ্রুত। বাংলাদেশ অধিনায়ক ১ রান করেন। ১৭৪ রানে তিন উইকেট হারানোর পর মুমিনুল ও মুশফিকুর রহিম মিলে ১২৩ রানের জুটি গড়েন। ফিফটি করেন দুজনেই।
৬৯তম ওভারের শেষ বলে মুমিনুল আউট হন ৮৭ রান করে। ১১৮ বলের ইনিংসে ছিল ১০টি চারের মার। বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত ইনিংস ঘোষণা করেন। মুশফিক অপরাজিত থাকেন ৫৩ রানে। ৮১ বলের ইনিংসে ছিল ২ চার ও ১টি ছক্কার মার।
দ্বিতীয় ইনিংসে আইরিশদের হয়ে গ্যাভিন হোয়ে ২ উইকেট নেন। অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনে ও জর্ডান নেইল ১টি করে উইকেট নেন।