স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ০০:৫২, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে স্বর্ণপদক জিতেছেন বাংলাদেশের চৈতি রানী দেব। ছবি: সংগৃহীত
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের প্রান্তিক সম্প্রদায় থেকে উঠে আসা প্রতিভাবান প্যারা অ্যাথলেট চৈতি রাণী দেব দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমস ২০২৫-এ জ্যাভেলিন ইভেন্টে স্বর্ণপদক জিতে বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করেছেন। তার এই অসাধারণ অর্জন তার দৃঢ় মনোবল, অধ্যবসায় ও অনন্য ক্রীড়া দক্ষতার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। চৈতির সাফল্য শুধু ব্যক্তিগত মাইলফলক নয়; এটি বাংলাদেশের প্যারা ক্রীড়াঙ্গনের জন্য এক ঐতিহাসিক অর্জন, যা দেশের সকল প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদের সম্ভাবনার উজ্জ্বল প্রতীক।
সীমিত সুযোগ-সুবিধার এক প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে উত্তরণ— চৈতির এই যাত্রা অনুপ্রেরণাদায়ী ও রূপান্তরমূলক। তাঁর সাফল্য সহস্রাধিক প্রতিবন্ধী তরুণ ক্রীড়াবিদের জন্য শক্তিশালী অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে, প্রমাণ করবে যে সঠিক সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও সুযোগ পেলে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন সম্ভব। আজ তিনি দেশের এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব, যার সাফল্যের গল্প আশা, সক্ষমতা ও ক্ষমতায়নের বার্তা বহন করে।
ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি অব বাংলাদেশ (এনপিসি বাংলাদেশ) ২০২৫ জাতীয় যুব প্যারা গেমস চলাকালে কঠোর প্রতিভা অনুসন্ধান কার্যক্রমের মাধ্যমে চৈতির সম্ভাবনা শনাক্ত করে। নির্বাচনের পর তিনি এক মাসব্যাপী নিবিড় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে অভিজ্ঞ কোচ ও প্রশিক্ষকরা তার দক্ষতা শানিত করা, শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার উপযোগী প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে নিবিড়ভাবে সহায়তা করেন। এই পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ প্রস্তুতি চৈতির প্রাকৃতিক প্রতিভাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এনপিসি বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, চৈতির অর্জন প্রমাণ করে— প্রতিভার প্রাথমিক শনাক্তকরণ, পদ্ধতিগত প্রশিক্ষণ এবং প্যারা অ্যাথলেটদের প্রতি নিয়মিত বিনিয়োগ অপরিহার্য। যথাযথ লালনপালন, আধুনিক সুবিধা ও উচ্চমানে প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা হলে বাংলাদেশের আরো বহু প্যারা অ্যাথলেট বিশ্বমঞ্চে সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হবেন।
চৈতি রাণী দেবের সাফল্য সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আরও শক্তিশালী সহযোগিতা ও সমর্থনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। বাংলাদেশের প্যারালিম্পিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে বাড়তি অর্থায়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্রীড়া কর্মসূচি, সহজপ্রাপ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং প্রতিবন্ধী অ্যাথলেটদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন কাঠামো অত্যন্ত জরুরি। সম্মিলিত উদ্যোগই নিশ্চিত করতে পারে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিশ্রুতিশীল অ্যাথলেটরা তাদের সর্বোচ্চ সম্ভাবনা বাস্তবায়নের সুযোগ পাবেন।
দুবাই ২০২৫ এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে চৈতি রাণী দেবের বিজয় বাংলাদেশের প্যারালিম্পিক অগ্রযাত্রায় এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্রীড়া বিকাশে নতুন উদ্দীপনা সঞ্চার করবে এবং দেশের প্যারা অ্যাথলেটদের অসামান্য সক্ষমতাকে জাতির সামনে আরও উজ্জ্বলভাবে উপস্থাপন করবে।